জাপার বিরুদ্ধে এককাট্টা আ.লীগ
সুনামগঞ্জ-৪ আসনটি সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী মমতাজ ইকবাল (জাতীয় পার্টি)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মোহাম্মদ ফজলুল হক আছপিয়া। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।
আওয়ামী লীগ
নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলেও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এবার দলের প্রার্থী চাইছেন। জেলা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ওরফে ইমন মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই মাঠে আছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী সাংসদ মমতাজ ইকবাল ২০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল মারা যান। উপনির্বাচনে সাংসদ হন আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান। আর ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রথমে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন এনামুল কবির। পরে আসনটি জাপাকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন এনামুল কবির। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা ওরফে মুকুট নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আপ্তাব উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘জেলা সদর থেকে জেলার রাজনীতি ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু এখানে আমাদের এমপি নেই। নেতা-কর্মীরা কার কাছে যাবে। তাই এবার জোটবদ্ধ নির্বাচন হলেও এই আসনটি আমরা রাখতে চাই।’ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হুদা বলেন, ‘১৬ বছর জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সংগঠন পরিচালনা করেছি। এবার বিপুল ভোটে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের উৎসাহে মাঠে নেমেছি। আশা করি, দল মূল্যায়ন করবে।’ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে এনামুল কবির বলেন, ‘সে হিসেবে আমিই তো এখানে দলের প্রার্থী। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন দলের প্রধান। এবার কোনোভাবেই যেন এই আসনটি অন্য কোনো দলকে ছেড়ে দেওয়া না হয়, সেটি আমরা কেন্দ্রকে অবহিত করেছি।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেছেন, জেলায় তাঁর নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ। সাংসদ থাকা অবস্থায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। আবারও নৌকা নিয়ে নির্বাচন করতে চান। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খায়রুল কবিরও আছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায়। তিনি নানাভাবে নিজের প্রার্থিতার কথা প্রচার করছেন।
বিএনপি
বিএনপির নেতাদের মধ্যে মান-অভিমান থাকলেও দলের চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সবাইকে একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মূলত দুটি নাম আলোচনায় আছে। তাঁরা হলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সাংসদ ফজলুল হক আছপিয়া এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন। এর বাইরে জেলা কমিটির দুই সহসভাপতি নাদীর আহমদ ও আবুল মনসুর মো. শওকত এখানে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেছেন, ‘দল যাঁকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তাঁকে নিয়েই কাজ করব।’দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন বলেন, ‘সদর উপজেলা পরিষদে টানা চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেই মাঠে কাজ করছি। তবে কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।’ প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে নিজের আগ্রহের কথা জানিয়ে ফজলুল হক আছপিয়া বলেন, ‘আমার মতো আরও কেউ কেউ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ ক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।’
জাতীয় পার্টি
আসনটি আওয়ামী লীগের কাছে ছাড়তে নারাজ জাতীয় পার্টি। বর্তমান সাংসদ পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ নির্বাচন মাথায় রেখেই সব কাজ করছেন। তিনি ছাড়া জাপা থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছেন সাবেক সাংসদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী ও মমতাজ ইকবালের ছেলে ইনান চৌধুরী। পীর ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন করার চিন্তা নিয়েই চার বছর ধরে মাঠে কাজ করছি। এখানে গত দুটি নির্বাচনে মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল। আগামী নির্বাচনেও এমনটাই থাকবে। আর যদি জোটবদ্ধ নির্বাচন না-ও হয়, তাহলে দলের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার প্রস্তুতিও আছে।’ নির্বাচনী এলাকায় পারিবারিক একটা পরিচিতি আছে জানিয়ে ইনান চৌধুরী বলেন, ‘বাবা এমপি ও মন্ত্রী ছিলেন। মা সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মাথায় মারা যান। মা-বাবার পথ ধরেই এলাকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই। দলের চেয়ারম্যান আমাকে কাজ করতে বলেছেন।’-দৈনিক প্রথম আলো।