হঠাৎ সশস্ত্র শিবির, সিলেটে আতঙ্ক
আওয়ামী লীগ নেতার মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের হঠাৎ সশস্ত্র হামলায় সিলেটে উত্তাপ ছড়িয়েছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিদবাজারে এ হামলার ঘটনার পর মহানগরীতে আতঙ্ক বিরাজ করছে শুক্রবার এ হামলার পর সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের শনাক্ত করা গেলেও এখনো পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। লিখিত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের ৫০ মিটারের মধ্যে ব্লগার অনন্ত বিজয় দাসকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সুবিদবাজার মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের পরে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর লিফলেট বিতরণের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর বোনের স্বামী আবদুল গনিসহ কয়েকজন বাধা দেন। এরপর শিবির কর্মীরা মসজিদ থেকে চলে যায়। আবদুল গনি আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের মালিকানাধীন মৌরশী রেস্টুরেন্টে আছে ধারণা করে সেখানে সশস্ত্র হামলা চালায় শিবির ক্যাডাররা। মৌরশী রেস্টুরেন্টের সিসিটিভির ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, পাঁচটি মোটরসাইকেলে করে ১০ থেকে ১২ জন শিবির ক্যাডার হামলায় অংশ নেয়। এদের প্রত্যেকের হাতেই রামদা ও লোহার পাইপ ছিল। দুজন রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে আবদুল গনিকে খুঁজতে থাকেন। তাকে সেখানে না পেয়ে রেস্টুরেন্টের ক্যাশ কাউন্টার ও খাবার স্ট্যান্ড ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়।
এরপর মুহূর্তের মধ্যেই মোটরসাইকেলে করে নগরীর নূরানী এলাকার দিকে চলে যান শিবির ক্যাডাররা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৭ নম্বর ওয়ার্ড শিবিরের সভাপতি দীপু এ হামলার নেতৃত্ব দেন। এ ব্যাপারে মৌরশী রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারী ও সিলেট মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হান্নান বলেন, আমার রেস্টুরেন্টকে টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে হয় না। ওদের টার্গেট অন্য কেউ ছিল। তবে টার্গেটের ব্যক্তিকে না পেয়ে ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি লিখিত কোনো অভিযোগ দায়ের করিনি। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে গেছে। এখন পুলিশই ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করি। জানতে চাইলে নগরীর বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গৌসুল হোসেন বলেন, এই ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দাখিল করেনি। অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় নগরীর আম্বরখানা দর্শন দেউরি এলাকায় যুবলীগ ও শিবির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জামায়াত-শিবির শক্ত অবস্থানে রয়েছে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ডাকা লাগাতার অবরোধের সময় নগরীর পীর মহল্লায় জামায়াতে ইসলামীর কয়েকজন নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ বাবুল হোসেন পাঙ্গাশ ও তার কর্মীরা।
এরপর থেকেই এই ওয়ার্ডে আফতাব গ্রুপের সঙ্গে জামায়াতের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। বিভিন্ন সময় এ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে উত্তেজনাকর পরিস্থিত সৃষ্টি হয়। এ নির্বাচনেও আফতাব কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আবার জামায়াত নেতা সাঈদ মো. আবদুল্লাহও এখানে কাউন্সিলর প্রার্থী। নির্বাচনের শুরু থেকেই এই দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা মারমুখী অবস্থানে রয়েছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে নিজের কোনো কর্মী জড়িত নন বলে জানিয়েছেন জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, আমার কোনো কর্মীর সঙ্গে কিছু ঘটনা ঘটেনি। জামায়াত সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে ঘটেছে বলেই শুনেছি। মসজিদে লিফলেট বিতরণকে কেন্দ্র করে একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে ঘটনার সূত্রপাত বলে জানান আবদুল্লাহ। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সিলেট জেলা শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ঘটনা ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াবে। অভিযোগ পাইনি বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাতগুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত অপরাধীকে গ্রেফতার করতে হবে। সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন ।