সরকারের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে কাজ করবেন না-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তারেক রহমান
লন্ডন :আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনকে নির্ভয়ে জনগণের পক্ষে কাজ করার আহবান এবং অনুবোধ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন,আপনারা দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীর প্রধানের একজন সন্তান হিসেবে আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ,এই অবৈধ সরকারের স্বার্থসিদ্ধির জন্যে আপনারা কাজ করবেন না। ‘নির্বাচনে ভোট ডাকাতির যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করছে তাতে আপনারা শরিক হবেননা। ইভিএম ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের ভোটাধিকার হরণের যে নীল নকশা সরকার প্রণয়ন করছে তাতে আপনারা জড়াবেন না। আপনারা এই লুটেরা সরকারের অপরাধের ভাগ নেবেন না। গণতন্ত্র প্রিয় মানুষের পক্ষে থাকুন। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হোন’। তারেক রহমান আরো বলেন, ইভিএম চালু করে দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীকে জনগনের মুখোমুখি করতে চাচ্ছে । আমার অনুরোধ থাকবে, জনগনের কাছ থেকে চুরি করা প্রায় চার হাজার কোটি টাকা দিয়ে কেনা এই ইভিএম পদ্ধতিতে জনগনের ভোট ডাকাতির যে প্ল্যান ও কর্মসূচী অবৈধ সরকার করতে চাচ্ছে সেই প্ল্যান ও কর্মসূচীতে আপনারা নিজেদেরকে জড়াবেন না। আপনাদেরকে বিতর্কিত করতে শেখ হাসিনা এবং তার বশংবদ নির্বাচন কমিশন আপনাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবে। সুতরাং আপনারা দেশের মানুষের প্রতিপক্ষ হবেন না। কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করবেন না। জনগণ আপনাদের শ্রদ্ধা করে, আপনারা আপনাদের সম্মান নষ্ট হতে দেবেন না । আপনারা জানেন জনগন কি চায়, আপনারা সেভাবেই কাজ করবেন এটাই আপনাদের কাছে আমার আহবান ।
ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) পূর্ব লন্ডনের দ্যা রয়্যাল রিজেন্সি অডিটরিয়ামে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষনে তিনি এই আহবান জানান। ২৫ মিনিটের বক্তব্যে তারেক রহমান, শেখ হাসিনার দু:শাসনের নানা দিক, বিশেষ করে,লুটপাট,ব্যাংক ডাকাতি,গুম,খুন ,নিপীড়ন, মিথ্যাচার, মানুষের সাথে প্রতারনাসহ সার্বিক চিত্র তুলে ধরে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তাদের করনীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেনযুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি আবদুল মালিক।
সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. কে এম মালিক, বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম, জাসাসের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিনসহ অনেকে। তারেক রহমান বলেন,ব্যাংক ডাকাত ও ভোট ডাকাতি করা এই সরকার, সারাবিশ্বে-আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচার হিসেবে খ্যাত। এই অবৈধ সরকার ভোট নামক নতুন আন্দোলনের ভয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের বলে বেড়াচ্ছে গত ১০বছরে তাদের আমলে যারা প্রশাসনসহ অন্যান্য সরকারী চাকুরিতে নিয়োগ পেয়েছেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে তাঁদেরকে চাকুরিচ্যুত করা হবে। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, আপনারা ভয় পাবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় এলে পুলিশ বাহিনী কিংবা জনপ্রশাসনে যারা রোয়েছেন, অন্যায়ভাবে কারো চাকুরি যাবে না ।
তারেক রহমান বলেন, আপনাদের কোন ভয় নেই, কারন আমরা জানি ও বুজি, এই অবৈধ সরকারের বিভিন্ন অবৈধ এমপি অবৈধ মন্ত্রী বিভিন্ন সময় আপনাদেরকে বাধ্য করেছে বিভিন্ন অন্যায় কাজ করতে। আপনারা জনগনের সাথে প্রতিনিয়ত উঠাবসা করেন, আপনারা এই দেশের নাগরিক। আপনারাও জানেন জনগন কি চায়, জনগণের ইচ্ছার প্রতিপলন ঘটাতে আপনারা কাজ করুন । আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে, জনগন আপনাদেরকে যে পবিত্র দায়িত্ব দিয়েছে আপনারা আপনাদের সেই পবিত্র দায়িত্ব পালন করুন । কারো কোনো ভয় নেই, আপনারা নির্ভয়ে, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আপনাদের পাশে থাকবে। আমরা জানি অবৈধ সরকারের হুকুম তামিল করতে গিয়ে অনেক অনৈতিক কাজ কাউকে কাউকে করতে হয়েছে। যার জন্য আপনারা প্রস্তুত ছিলেন না সুতরাং এর দায়ভারও আপনাদের নয়। তারেক রহমান আসন্ন নির্বাচনকে আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ হিসাবে তুলে ধরে ছাত্র, যুবকসহ সকলের উদ্দেশ্য বলেন, আজকে নির্বাচন নামক যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এটা কিন্তু কোন সাধারন নির্বাচন নয়, এটা জনগনের গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন, এটা স্বাধীনতা রক্ষার নির্বাচন, এটা বাক- স্বাধীনতা রক্ষার নির্বাচন, এটা দেশের গণমাধ্যমকে ডিজিটাল আইন থেকে মুক্ত করার নির্বাচন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এটা এমন নির্বাচন, যে নির্বাচন সীমান্তে ফেলানি হত্যাকাণ্ডের জবাব দেবে, সাগর রুনির হত্যাকাণ্ডের জবাব দেবে, শেখ হাসিনার দায়িত্বে অবহেলার কারনে দেশপ্রেমী যে ৫৭ জন সেনাবাহিনীর অফিসার হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছেনা সেই হত্যাকাণ্ডের জবাব দেবে। তিনি বলেন, এই নির্বাচন, গত ১০ বছরে জনগনের যে লক্ষ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে সেই পাচার রোধের নির্বাচন। নকল ও প্রশ্ন ফাঁস থেকে রক্ষা করে যথাযথ শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের নির্বাচন । এই নির্বাচন সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ বিএনপির হাজার হাজার গুম খুন হওয়া নেতা কর্মী হত্যার জবাবের নির্বাচন । এটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার নির্বাচন । তারেক রহমান বলেন, এই নির্বাচন, গত ১০ বছরে যে সকল গুণী ব্যক্তিবর্গের মান সন্মান নষ্ট করেছে তাদের সম্মান রক্ষার নির্বাচন । কোটা আন্দোলনের দাবীতে রাজপথে নামা হাজারো শিক্ষার্থীর উপর এই ব্যাংক ডাকাত সরকার যে নির্যাতন করেছে সেই নির্যাতনের জবাবের নির্বাচন। নিরাপদ সড়ক চাই’ এর দাবীতে রাজপথে কোমলমতি শিক্ষার্থী ভাই বোনদের উপর এই অবৈধ সরকার যে অত্যাচার করেছে সেই অত্যাচারের জবাব দেবার নির্বাচন ।
তারেক রহমান আরো বলেন, প্রিয় দেশবাসী, এই নির্বাচন শুধু নির্বাচনই নয়। এটি আরও একটি মুক্তিযুদ্ধ। যেই যুদ্ধের মাঠ হলো ভোটকেন্দ্রগুলো এবং যার সৈনিক হলো ১০কোটি ভোটার। জাতির মুক্তির জন্য এই ১০কোটি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে এবং এ যুদ্ধে সফল হতে হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের পূর্ব পুরুষরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে গিয়েছেন কিন্তু এই দেশের বিরুদ্ধে সময়ে অসময়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলেছে এবং বর্তমানেও চলছে। তারেক রহমান বলেন, প্রিয় দেশবাসী, এই নির্বাচন শুধু নির্বাচনই নয়। এটি একটি মুক্তিযুদ্ধ। ভোটকেন্দ্রগুলো এই মুক্তিযুদ্ধের মাঠ এবং এর সৈনিক হলো ১০কোটি ভোটার। জাতির মুক্তির জন্য এই ১০কোটি ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে হবে এবং এ যুদ্ধে সফল হতে হবে।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের পূর্ব পুরুষরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন। এই স্বাধীন দেশের বিরুদ্ধে সময়ে অসময়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলেছে এবং এখনো চলছে। এই নির্বাচন সেই সকল ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে । এই নির্বাচন নতুন প্রজন্মের জন্য যারা নিরাপদ সড়ক তৈরি করতে চেয়েছিল তাদের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন । নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার মুক্তিযুদ্ধ, বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, এই নির্বাচন নামক মুক্তিযুদ্ধে ১০ কোটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র কোন বন্দুক বা গোলা বারুদ হবেনা। এই ১০ কোটি মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র হবে তাদের ব্যালট পেপার । টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বিএনপির যত নেতা কর্মী আছেন তাঁদেরকে একটি পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে হবে। আপনারা এই মুক্তিযুদ্ধে ১০ কোটি মুক্তিযোদ্ধাকে ভোট কেন্দ্রে নিরাপদে নিয়ে যাবেন । যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি তাদের সামনে আজ সুযোগ এসেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দশ কোটি ভোটারদের সঙ্গে থাকতে হবে। তাদেরকে উজ্জীবিত করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় ঐক্যে এই সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। তারা এখন ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। শত অত্যাচার নিপীড়ণের সারাদেশে বিএনপি’র প্রতিটি নেতাকর্মী সমর্থক ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। এই ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ১০ কোটি ভোটারের আন্দোলনে হেরে যাবার ভয়ে অবৈধ সরকার আন্দোলনকে বন্ধ করতে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেখানে আমেরিকা, বৃটেন, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এই ইভিএম ব্যবহার করা হয়না । ভারতের সংসদে একজন এমপি দেখিয়েছেন কিভাবে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট চুরি করা হয়। অনেক দেশে ইভিএম মেশিন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারন তারা দেখেছে ইভিএমের মাধ্যমে কিভাবে ভোট চুরি করা হয়।
তারেক রহমান বলেন, এই অবৈধ সরকারের ইতিহাস হল ভোট চুরির ইতিহাস। এখন তারা নতুন করে শুরু করেছে ভোট ডাকাতি। তরুন প্রজন্মের যারা নিরাপদ সড়কের দাবী করেছিলো তারেক রহমান তাদের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, তরুন প্রজন্মের ভাই বোনেরা,তোমাদের কাছে আমার দাবী তোমরা নিরাপদ সড়কের পাশাপাশি নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নাও। সারা বাংলাদেশ তোমাদের কাছে সাহায্য চায়। যদি তোমরা এই দায়িত্ব পালন করতে পার তবে তোমরা নিরাপদ সড়ক তো বটেই গড়তে পারবে একটি নিরাপদ বাংলাদেশ । তরুন প্রজন্মের নতুন ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ভোট যুদ্ধের দিন তোমাদেরকে আবার কাধে দায়িত্ব তুলে নিতে হবে । সেটা যদি পারে তবে শুধু নিরাপদ সড়ক নয়,তোমরা গড়তে সক্ষম হবে নিরাপদ বাংলাদেশ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা কবি রকিব লিখনে’র একটি আলোচিত শ্লোগান বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌছে দিয়েছিলে। তোমাদের কারনে সেই শ্লোগানটি মানুষের মুখে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমিই বাংলাদেশ।’ তারেক রহমান বলেন,কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্বাচন করছে বিএনপি। তোমাদের ন্যায্য দাবী বাস্তবায়ন ঘটাতে চায় বিএনপি। নতুন প্রজন্মের পাশে থাকার অঙ্গীকার করছে বিএনপি। শেখ হাসিনার প্রতিহিংসা ও জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, মাদার অফ ডেমোক্রেসি খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বিএনপির হাজার-হাজার, লক্ষ নেতা-কর্মীকে গায়েবি মামলা, মিথ্যা মামলা দিয়ে বন্দি করে রাখার অপচেষ্টা করছে। অপচেষ্টা করছে, গুম-খুনের মাধ্যমে বিএনপির হাজারো নেতা-কর্মীদের গায়েব করে দিতে।
তারেক রহমান বলেন, একটি দল,যারা অবৈধভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছে । এই দলটির অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, যত বারই তারা দেশের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পেয়েছে প্রত্যেকবারই পরিস্থিতি একইরকম। তিনি বলেন,ক্ষমতাসীন সরকার সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরেছে, গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরেছে, জনগণের উপর চালাচ্ছে, অত্যাচার নির্যাতনের স্টীম-রোলার। তাই এখন দেশের মানুষের সামনে সুযোগ এসেছে এই নিকৃস্টতম স্বৈরাচারকে ব্যালটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেয়ার। তাই আমাদের শ্লোগান, আমার ভোট আমি দেব জেক খুশি তাকে দেব। এই চেতনা ধারণ করে রুখে দাড়াতে হবে এই ব্যাংক ডাকাত সরকারের বিরুদ্ধে।