দিরাই-শাল্লা উপনির্বাচন : শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সরব নারী ভোটাররা
জিয়াউর রহমান লিটন-
সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের উপনির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় নারী ভোটাররা সরব হয়ে উঠছেন। স্থানীয়রা জানান- অন্য জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে মহিলা নেতৃত্বের প্রচারণায় এবার নারী ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগছে। দিরাই-শাল্লায় এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের নারী প্রার্থী হয়েছেন। বিশেষ করে হাওর-বাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের কোন নির্বাচনী এলাকায় এর আগে কখনো নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর পর হাওর-বাওর অধ্যুষিত দিরাই-শাল্লায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাঁর স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তকে। ড. জয়া সেনগুপ্ত প্রত্যন্ত হাওর এলাকায় নারী ও পুরুষ কর্মীসহ প্রতিদিনই কোন না কোন জনপদে যাচ্ছেন গণসংযোগে। নারী প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী এলাকার নারীদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। এছাড়াও ব্যাপকভাবে মহিলা নেতৃত্বের প্রচারণায় পিছিয়ে পড়া অনেক নারীরা এগিয়ে আসছেন, নারী প্রার্থী হিসেবে প্রাণখুলে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে অনেককে।
বিগত কয়েক দিনের ব্যবধানে ড. জয়া সেনগুপ্তের গণসংযোগের সঙ্গী হিসেবে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভানেত্রী সাফিয়া খাতুন, জেবুন্নেছা হক, জাতীয় মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদিকা শিরিন রুখসানা, দপ্তর সম্পাদক কামরুননেছা মান্নান, অ্যাডভোকেট শাহানা রব্বানী এমপি, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য শামিমা শাহরিয়ার, কনিজ রেহনুমা রব্বানী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রাজরানী চক্রবর্তীসহ বেশ কিছু কেন্দ্রীয় নেতা নৌকার সমর্থনে দিরাই-শাল্লার প্রত্যন্ত গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণায় করছেন।
এদিকে, প্রয়াত সুরঞ্জিত পুত্রবধূ রাখী মুখার্জী নৌকার সমর্থনে নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণসহ ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার চাঁনপুর ও পৌর সদরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তিনি নারীদের নিয়ে গণসংযোগ করেছেন। ভাটিবাংলা মহিলা সমিতির সভানেত্রী নার্গিস সুলতানা বুবলী বলেন- নারী এমপি হলে ভাটির নারীদের দীর্ঘদিনের না বলা কথা, বলার সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। বেকার নারীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, এমন প্রত্যাশা নিয়ে জয়া সেনকে নারীরা ভোট দেবে বলে জানান তিনি।
দিরাই পৌরসভার কাউন্সিলার মোছাম্মৎ হেলেনা বেগম বলেন- “এই নির্বাচনে মহিলাদের আগ্রহ বাবুর (প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত) নির্বাচনের চেয়ে বেশি। মহিলারা তাঁকে দেখার জন্য পথে পথে দাঁড়িয়ে থাকে। আনোয়ারপুরের বাসভবনেও সব সময় নারীদের ভিড় থাকে।” একই মন্তব্য করলেন দিরাই পৌরসভার কাউন্সিলর মোছাম্মৎ খুশনামা বেগম।
দিরাই পৌরসভা আদর্শ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দীপালি দাস বলেন- “আমি ড. জয়া সেনগুপ্তের সঙ্গে কয়েকটি স্থানে গণসংযোগে গিয়েছি। উপজেলার গইচ্ছা গ্রামে তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলাম, দুই পাশে শত শত মহিলা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁকে দেখতে। একই অবস্থা রাজানগর এলাকায়ও দেখেছি। সভা-সমাবেশেও মহিলাদের উপস্থিতি অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। হোসেনপুর এলাকায় গিয়ে মহিলাদের ব্যাপক আগ্রহ দেখেছি। হোসেনপুর কেন্দ্রে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কোন দিন লিড করেননি। কিন্তু এবার ঐ এলাকায় মহিলাদের যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখেছি। ফলাফল অন্য যে কোন নির্বাচনের চেয়ে ভাল হবে।” শাল্লা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মুনিরা বেগম বলেন- “কেউ বলেন জয়া সেনকে নৌকায় ভোট দেবেন, আবার কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনকে সিংহ মার্কায় ভোট দেবার কথাও বলছেন। তবে মহিলার দরদ মহিলারাই বেশি বুঝবো”।
ড. জয়া সেনগুপ্তের গণসংযোগের সঙ্গী কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক, সুনামগঞ্জ নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি অ্যাড. শামীমা শাহরিয়ার বলেন- “দিরাই-শাল্লার উপনির্বাচনে মহিলাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া দেখছি। দিরাই ও শাল্লা দুই উপজেলায়ই নারী ভোটাররা সরব। অনেক স্থানে পুরুষের চেয়ে সভা সমাবেশে মহিলাদের জমায়েত বেশি হচ্ছে।” আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্ত বলেন- “প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সব সময়ই নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। আমার ক্ষেত্রে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী এবং নারী দুটোই তাঁর বিবেচনায় হয়তো ছিল। নারী প্রার্থী হওয়ায় গণসংযোগে বিভিন্ন এলাকায় গেলে নারীরা আমাকে দেখতে আসেন, আমিও তাদের দেখছি, কথা বলছি।”
প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ মার্চ দিরাই-শাল্লা উপনির্বাচন। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৪৬ হাজার ১৩১। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৯১ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২২ হাজার ৬৪০। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত নৌকা প্রতীক নিয়ে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী কুয়েত প্রবাসী ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন সিংহ প্রতীকে লড়ছেন।