গানের পাখি বুলবুল বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত
বীর মুক্তিযোদ্ধা, বরেণ্য গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তৃতীয় জানাজা শেষে তাকে সেখানে দাফন করা হয়। এর আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সর্বস্তরের মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে বাদ জোহর অনুষ্ঠিত হয় তার প্রথম জানাজা। এরপর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্নের পর বরেণ্য এ শিল্পীর মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর আফতাব নগরে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই কিংবদন্তি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর। তার গানে প্রেম, বিরহ, কটাক্ষ, অনুরাগ, দেশপ্রেম, শিশুর সারল্য, সামাজিক নাটকীয়তা, বিদ্রোহ, ফুটে উঠত আপন স্বকীয়তায়। তার সৃষ্ট গানে মনে হতো সুর ও কথা একসঙ্গেই যমজ হয়ে জন্ম নিয়েছে! তার লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গান হলো- ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘মাঝি নাও ছাইড়া দে ও মাঝি পাল উড়াইয়া দে’, ‘সেই রেল লাইনের ধারে’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’, ‘ও আমার আট কোটি ফুল দেখ গো মালি’, ‘মাগো আর তোমাকে ঘুম পাড়ানি মাসি হতে দেব না’, ‘একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে না’, ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি’, ‘ও আমার মন কান্দে’ এবং ‘ও আমার প্রাণ কান্দে’।
এছাড়া সিনেমার গানের মধ্যে- ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘কী আমার পরিচয়’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘তোমার আমার প্রেম এক জনমের নয়’, ‘তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ’, ‘জীবনে বসন্ত এসেছে ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন’, ‘ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী’, ‘আমার হৃদয় একটা আয়না’, ‘ফুল নেব না অশ্রু নেব’, ‘বিধি তুমি বলে দাও আমি কার’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা হৃদয়ে সুখের দোলা’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’ এবং ‘যারে এক জনমে ভালবেসে ভরবে না এ মন’, ‘তুমি সুতোয় বেঁধেছ শাপলার ফুল নাকি তোমার মন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতির পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।