প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় জানেনা লন্ডনের বাংলা মিডিয়া
আওয়ামীলীগের দুই নেতার হাতাহাতি-
লন্ডনে অনেকটা গোপনে হঠাৎ করেই বৃহস্পতিবার আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেছে যুক্তরাজ্য সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মতবিনিময় সভায় যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে এই মতবিনিময়ে স্থানীয় কোন বাংলা মিডিয়াকে অবহিত করা হয়নি। ফেইসবুকে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়ের ছবি দেখে অনেক সাংবাদিক অনুষ্ঠানের খোঁজ খবর নেয়ার চেস্টা করেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টারে তরফ থেকে একটি সংবাদের লিংক সর্বরাহ করা হয় একটি ওয়ার্টআপ গ্রুপে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় সভায় প্রবেশ করতে না পেরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামীলীগের দুই নেতা। এ সংক্রান্ত খবর শুনা যায় আতাউর রহমান নামক এক আওয়ামীলীগ নেতার লাইভ ফেইসবুক ভিডিও থেকে। তিনি লাইভে বলেছেন গত ৯দিন যাবত তিনি বেডফোর্ড থেকে লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে। অথচ আজ যখন সবাই প্রধামন্ত্রীর সাথে দেখা করতে যান তখন বেডফোডে বসবাসকারী লন্ডন মহানগর আওয়ামীলীগের এই নেতাকে নেয়া না হলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের এক যুগ্ম সম্পাদককে ধাক্কাদেন। এসময় কথা কাটাকাটি শুরু হলে যুগ্ম সম্পদকের পক্ষে বেশ কিছু নেতা বেডফোর্ডের এই নেতার দিকে তেড়ে আসেন। তবে সিনিয়রদের কারনে ঘটনাটি বেশ গড়ায়নি।
গত ১লা মে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্য সফরে আসেন। প্রধানমন্ত্রী কোন হোটেলে উঠবেন তাও পরিস্কার করেনি কেউ। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ভুল হোটেলের সামনে গিয়ে জুড়োহন। এরপর থেকে প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে কি করছে সে সম্পর্কে কোন বিবৃতি দেয়নি বাংলাদেশ হাইকমিশন কিংবা পররাস্ট্রমন্ত্রনালয়। প্রধামন্ত্রীর সফর সরকারী না ব্যক্তিগত তা নিয়েও ব্যাপক কৌতুহলের সৃস্টি হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাজ্য সফরের প্রথম দিন থেকেই পিছু নিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। প্রথম দিন বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ী বহর থামিয়ে বিক্ষোভ দেখায় দলের নেতাকর্মীরা। এর পর থেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাজ হোটেলে গিয়েই যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুককে ফোনদেন। এসময় সৈয়দ ফারুকসহ দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ভুল জাগায় অবস্থান করছিলেন। সেন্ট্রাল লন্ডনের বন্ড স্ট্রিট ট্রেইন স্টেশনের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের ভীড়ের মধ্যেই ফোন রিসিভ করেন সৈয়দ ফারুক। পরে তিনি ফোন লাউড স্পীকারে দিয়ে নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনানোর চেস্টা করেন। এসময় কয়েকজন সংবাদকর্মীসহ দলের কিছু নেতা ফেইসবুক লাইভে ছিলেন। ফোনে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ও তারেক রহমানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের জন্য লন্ডনের কোন হোটেল আমাকে জায়গা দেয় না। তারেক ও বিএনপিকে বলে দিয়ো জোর করে দাবী আদায় করা যায় না। বেশি ভাড়া ভাড়ী করলে তার মায়ের জামিন জীবনেও হবে। অবশ্যই এই ভিডিওটি ভাইরাল হলে কোটি কোটি মানুষ প্রধান শেখ হাসিনার কথা শুনেন। সেইদিনের পর থেকে নিরবেই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই মতবিনিময় করেন তিনি। এসময় তিনি লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, খুনি ও অর্থ পাচারকারীদের অবশ্যই শাস্তি হবে।
লন্ডনের তাজ হোটেলে মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। খুনি ও অর্থ পাচারকারীরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক, যত টাকাই খরচ করুক, তাদের কোনো ক্ষমা নেই এবং জাতি তাদের ক্ষমা করবে না।’ তিনি বলেন, ‘আদালত খুনি ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আমরা এই রায় কার্যকরের পদক্ষেপ নেব। তারা যত স্লোগানই দিক, যত তিরস্কারই করুক, তাদের অবশ্যই শাস্তি হবে।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখা ও দলের সহযোগী সংগঠনগুলো এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ এতে সভাপতিত্ব করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।