কানাইঘাটে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি প্রবাসী
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে:
একটুও হাত কাঁপলো না হুসনা বেগমের। প্রেমিককে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গলা কেটে খুন করলো তার স্বামীকে। এরপর সেই লাশ পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকিতে ফেলে দেয়। এ ঘটনার পরও কোনো অনুশোচনা ছিল না হুসনার। স্বামীর ঘরেই স্বাভাবিকভাবে দিব্যি চলাফেরা করেন তিনি। ঘটনার দুইদিন পর বিষয়টি পুলিশকে জানালে আটক করা হয় হুসনাকে। আর আটকের পর তার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে প্রকৃত সত্য। এ ঘটনাটি ঘটেছে সিলেটের কানাইঘাটের বাউরভাগ নূরপুর গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে- তারা বিষয়টি জেনে লাশ উদ্ধার করেছেন। হুসনাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অপর আসামিদের খুঁজে ফিরছেন তারা।
কানাইঘাটের বাউরভাগ নূরপুর গ্রামের প্রবাসী ফারুক আহমদের স্ত্রী হুসনা বেগম। ফারুক আহমদ কয়েক বছর ধরে সৌদি আরবে বসবাস করছেন। আর তিন সন্তানকে নিয়ে নিজ বাড়ি কানাইঘাটের নূরপুর গ্রামে বসবাস করছেন হুসনা বেগম। স্বামী ফারুক আহমদ প্রবাসে থাকার সুযোগে একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির নছির আলী আক্কার পুত্র মোস্তফা আহমদের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল ফারুক আহমদের স্ত্রী হুসনা বেগমের। বিষয়টি জানতো বাড়ির মানুষ। গ্রামেও তাদের পরকীয়ার বিষয়টি চাউর হয়েছে। কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কানাকানি ছিল। ফারুক আহমদ সৌদি আরবে থাকাকালেই পরকীয়া নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বিচার হয়। এরপরও তাদের প্রেমের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি। বরং তারা একে অপরের প্রেমে হাবুডুব খান। রাতে প্রেমিক মোস্তফা চলে আসতো হুসনার ঘরে। এদিকে, এই অবস্থায় প্রায় দু’মাস আগে ফারুক আহমদ সৌদি আরব থেকে বাড়িতে চলে আসে। এতে মোস্তফা আহমদের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক নিয়ে হুসনা বেগম ও ফারুক আহমদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া-বিবাদ দেখা দেয়। মোস্তফার কবল থেকে স্ত্রী হুসনাকে ফিরিয়ে আনতে নানা চেষ্টা করেও পারেননি। পরিবারের এই বিবদমান অবস্থার মধ্যে গত রোববার থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদি ফেরত প্রবাসী ফারুক আহমদ।
তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ নিয়ে ফারুকের স্বজনরা স্ত্রী হুসনার সঙ্গে কথা বললেও তারা কোনো সদুত্তর পায়নি। নিখোঁজ ফারুকের ব্যাপারে পরিষ্কার কোনো উত্তর দেয়নি হুসনা বেগম। বিষয়টি নিয়ে রহস্য দেখা দেয় ফারুকের পরিবারের মধ্যে। হুসনার ঘরে রক্তের দাগও দেখতে পান স্বজনরা। রোববার থেকে নিখোঁজ হওয়া ফারুকের সন্ধান না পেয়ে মঙ্গলবার বিকালে সিলেটের কানাইঘাট থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ফারুকের চাচা শামসুল হক। প্রবাসী ফারুক নিখোঁজের খবর পুলিশের কাছে পৌঁছামাত্র তারা ঘটনাটি তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় নিহতের স্ত্রী গোরকপুর গ্রামের মৃত মসাহিদ আলীর মেয়ে ৩ সন্তানের জননী হুসনা বেগমকে মঙ্গলবার রাতে আটক করে কানাইঘাট থানায় নিয়ে আসে। আটকের পর প্রথমে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদকালে হুসনা ঘটনাটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তার ঘরে রক্ত কোথা থেকে এলো- এরকম প্রশ্ন করা হলে আটকে যায় হুসনা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে রাতেই থানায় খুনের ঘটনা স্বীকার করে হুসনা বেগম। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ৪টায় ফারুক আহমদের লাশ সেপটি ট্যাংকিতে খুঁজে পায় পুলিশ।
পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গতকাল বুধবার সকাল ৭টায় ফারুক আহমদের গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়না তদন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। হুসনা বেগম পুলিশের কাছে জানিয়েছে- তার প্রেমিক মোস্তফা আহমদের সঙ্গে পরামর্শ করে সে রাতে তার স্বামী ফারুক আহমদকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ায়। ঘুমের ট্যাবলেট সেবনের পর ফারুক অচেতন হয়ে পড়লে রাতেই তার প্রেমিক মোস্তফাকে নিয়ে গলা কেটে স্বামীকে খুন করে। এবং লাশ অজ্ঞাত করে রাখতে সেপটি ট্যাংকির ভেতরেই ফেলে রাখে। কানাইঘাটের ওসি আব্দুল আহাদ জানিয়েছেন- ফারুক আহমদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি তার স্ত্রী হুসনা বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের মোস্তফা আহমদের প্রেমঘটিত কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, মোস্তফা আহমদের সঙ্গে হুসনা বেগমের স্বামী ফারুক আহমদের ইতিমধ্যে কয়েকবার এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। যার কারণে হুসনার সহযোগিতায় মোস্তফা আহমদ ও তার সহযোগীরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় ফারুক আহমদের স্ত্রী হুসনা বেগমকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অন্যদের আটক করার চেষ্টা চলছে।