গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, রাজধানী ঢাকার প্রায় ৮৪ শতাংশ বহুতল ভবনই ত্রুটিপূর্ণ ও নানা বিধি-বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গত ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর ১ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজউকের আটটি জোন থেকে ২৪টি টিম গঠন করে বহুতল ভবন (১১ তলার উপরে) পরীক্ষা করা হয়। এ সময় পরিদর্শক দল ঢাকায় ১ হাজার ৮১৮টি ভবন পরীক্ষা করে। এর মধ্যে মাত্র ২৯৩টি ভবন অনুমোদিত নকশা মোতাবেক নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান গণপূর্তমন্ত্রী। বাকি ১ হাজার ৫২৫ টি বহুতল ভবনই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিতে নির্মাণ করা হয়েছে, যা পরিদর্শন করা ভবনের প্রায় ৮৪ শতাংশ। অনুমোদিত নকশা না থাকা, ঊর্ধ্বমুখী ব্যত্যয়, সেটব্যাক ও অন্যান্য ব্যত্যয়, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা না থাকা, অগ্নি নির্গমন সিঁড়ি না থাকা ও ত্রুটিপূর্ণ সিঁড়ি থাকাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যত্যয় ও ত্রুটি পাওয়া গেছে এসব ভবনে।

মন্ত্রী বলেন, ‘পরিদর্শন করা ১ হাজার ৮১৮ ভবনের মধ্যে ২৭৭টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদন নেয়া হয়নি। ৬৭৪টি ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়মানুযায়ী উন্মুক্ত স্থান (সেটব্যাক) রাখা হয়নি। ১ হাজার ৮১৮টি ভবনের মধ্যে রাজউক ছাড়া সরকারের অন্যান্য সংস্থা থেকে অনুমোদিত ভবন রয়েছে ২০৭টি। এই ২০৭টির মধ্যেও ৩২টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে নিয়ম না মেনে। ৬৪টির ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে উন্মুক্ত স্থান রাখা হয়নি।’ শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার অ্যালার্ম, হোস পাইপ, ফায়ার হাইড্রেন্ট) আছে ৫৩৯টি ভবনে, আর ১ হাজার ১৫৫টিতে নেই। অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি যথাযথ আছে এমন ভবন ৭৮৬টি। তবে ত্রুটিপূর্ণ অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি থাকা ভবনের সংখ্যা ৭২১টি। ১ হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের মধ্যে অগ্নিনির্গমন সিঁড়ি নেই ৫৬৬টিতে।’ পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘১ হাজার ৮১৮টি বহুতল ভবনের মধ্যে রাজউকের অনুমোদিত নকশা আছে ১ হাজার ১৩৬টির। রাজউক ব্যতীত অন্যান্য সরকারি সংস্থার অনুমোদিত ভবন ২০৭টি। ৪৩১টি ভবনের মালিক রাজউকের অনুমোদিত নকশা দেখাতে পারেননি। এ ছাড়া সরকারি অন্যান্য সংস্থার অনুমোদিত ভবনের মধ্যে নকশা দেখাতে পারেনি ৪৪টি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব বহুতল ভবন রাজউকের নকশা অনুমোদনের পর হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ঊর্ধ্বমুখী ব্যত্যয় আছে ২৭৭টিতে। নিয়ম অনুযায়ী উন্মুক্ত স্থান (সেটব্যাক) ও অন্যান্য অনিয়ম রয়েছে ৬৭৪টিতে। এছাড়া বহুতল ভবনের ক্ষেত্রে নকশা দেখাতে ব্যর্থ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে নকশা নেই- এমন ভবনের সংখ্যা পাওয়া গেছে ৪৭৮টি।’ যেসব ভবনের নকশা নেই সেসব ভবন মালিকদের সময় বেধে দেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা যদি এই সময়ের মধ্যে নকশা দেখাতে না পারেন তাহলে ধরে নেয়া হবে সেটা অবৈধ নকশার বিল্ডিং। সরকারি হোক বেসরকারি হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn