জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২০তম জন্মবার্ষিকী
কাজী নজরুল ছিলেন সেই মুষ্টিমেয় কবিদের একজন, যিনি রবীন্দ্র প্রভাবের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন চালু ছিল। তিনি প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক এবং অনন্য। বিশ্বসাহিত্যে তার মতো কবি বাসত্মবিকই খুব কম। তবু কেউ কেউ কাজী নজরুলের সঙ্গে রুশ কবি মায়কোভস্কি ও তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কাব্যের মিল খুঁজে পান। সবকিছু মিলিয়ে নজরুল এক বিচিত্র ও বহুমুখী প্রতিভা। নজরুল একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে মানবতাবাদী। তার গানগুলো জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা জুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কিন্তু কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি। তিনি সারাজীবনই মানবতার সাধনা করেছেন। কাজী নজরুলের কবিতা, গান ও গদ্য উপমহাদেশে মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিক হিসেবে নজরুল অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিস্ময়কর প্রতিভা নজরুল কখনই ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। বলা চলে দারিদ্র্য ছিল তার চিরকালের সঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন।দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তার সাহিত্য সাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি দীর্ঘকাল বেঁচেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা-গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবির সম্মান দেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।