এরশাদের ‘আশীর্বাদে’ আসছে জাতীয় ইসলামি মহাজোট!
জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় ঐক্যজোটে’র সঙ্গে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে আত্মপ্রকাশ ঘটছে নতুন একটি ধর্মভিত্তিক জোটের। ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে স্বল্প পরিচিত প্রায় ৩৫টি দলের এই জোটটির নাম ঠিক করা হয়েছে ‘জাতীয় ইসলামি মহাজোট’। জোটটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে ‘আশীর্বাদ’ দিতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আসন্ন জাতীয় ইসলামি মহাজোরেটর নেতৃত্বে রয়েছে মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুকের গণ ইসলামিক জোট। যিনি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর দূর-সম্পর্কের চাচা। আর এই পরিচয়টিকেই সামনে আনছেন খোদ আবু নাসের ওয়াহেদ। তিনি বলেন, ‘শিরীন শারমিন চৌধুরী আমার ভাতিজি।’
জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ইসলামী মহাজোটের শরিক সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামিক লিবারেল পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা আতাউর রহমান আতিক বলেন, ‘বৃহস্পতিবার নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে। প্রায় ৩৫টি দল এতে যোগ দিতে পারে। আশা করি, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এতে উপস্থিত থাকবেন।’
বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার মধ্যেই জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত জাতীয় ইসলামি মহাজোটের অনুষ্ঠানে এরশাদ উপস্থিত থাকবেন বলে জাপার নেতারাও জানান। দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্যার থাকবেন। জাতীয় ইসলামি মহাজোটের নেতারা স্যারের আশীর্বাদ চান। তাই অনুষ্ঠানে স্যারকে চিফ গেস্ট রাখা হয়েছে। স্যার কাল (বৃহস্পতিবার) যাবেন।’
এরশাদের রাজনৈতিক সচিব ও জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় জানান, ‘স্যার অনুষ্ঠানে যাবেন। শুনেছি ২৮টি দলের সমন্বয়ে জোট গঠিত হচ্ছে। সকালের মধ্যে হয়তো আরও ২টি দল যুক্ত হতে পারে।’ কোন কোন দলের সমন্বয়ে জোট হচ্ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কালই (বৃহস্পতিবার) জানা যাবে।’
প্রসঙ্গত, বাংলা ট্রিবিউনে গত ২৫ মার্চ এ বিষয়ে ‘জাতীয় ঐক্যজোট’ নিয়ে আসছেন এরশাদ! শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়, এরশাদের নেতৃত্বে একটি জোট গঠিত হচ্ছে। ওই জোটে একটি ধর্মভিত্তিক জোটও থাকবে।
জাতীয় ইসলামি মহাজোটের একটি সূত্র জানায়, ৫টি ঘোষণাকে প্রতিপাদ্য করে নতুন ঐক্যেজোটের ঘোষণা দেওয়া হবে। এই পাঁচটি ঘোষণা হলো, এক. নতুন জোট বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা, ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করে পরিপূর্ণ জীবনযাপনের লক্ষ্যে সবার অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করা। দুই. সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। তিন. নারী ও শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। চার. জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয় থেকে দেশরক্ষা। পাঁচ. আলেম সমাজের অধিকার নিশ্চিত ও ইসলামি মূল্যবোধ সুমন্নত রাখা।
নতুন জোটের শরিক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন নেতা জানান, কিছু অখ্যাত দলের সমন্বয়ে একটি জোট গঠিত হচ্ছে। এই জোটে এরশাদের অংশগ্রহণ অনেকটাই সমালোচনার জন্ম দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, ‘স্যারকে বলে লাভ কী? কিছু মানুষ তাকে ঘিরে রেখেছেন। এখন বললেও লাভ নেই। স্যারকে ব্যাবহার করে যারা বাণিজ্য করেন, এমন কিছু লোকই এমন অখ্যাতদের দিয়ে জোট করাচ্ছেন।’
দলটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘জঙ্গিবাদের এই সংকটকালে নাম না-জানা ইসলামি দলগুলোর জোটে অংশ নিয়ে বিপদে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।’
প্রসঙ্গ, গত ২৫ মার্চে জাপার প্রেসিডিয়ামের সভায়ও নামসর্বস্ব দল দিয়ে জোট না করার পক্ষে আলোচনা ছিল। যদিও জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলছেন, ‘নতুন জোটকে আশীর্বাদ দিতেই যাচ্ছেন এরশাদ।’
নতুন জোটের শরিক দলগুলো হিসেবে যে নামগুলো এসেছে হাতে। সেগুলো হচ্ছে, গণ ইসলামিক জোট, পিপলস জাস্টিস পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক লিবারেল পার্টি, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামি জনকল্যাণ পার্টি, ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, জমিয়তে মুসলিমিন বাংলাদেশ, ন্যাপ-ভাসানী, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, ইসলামি গণ আন্দোলন, জাতীয় ইসলামি আন্দোলন, জমিয়তুল ওলামা পার্টি, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত পার্টি, খেলাফত বাস্তবায়ন পার্টি, ইসলামি আক্বিদা সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামী সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম জনতা পার্টি, ইসলামি আক্বিদা সংরক্ষণ আন্দোলন, খেদমতে খালক পার্টি, ওলামা মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামি পার্টি, ইসলামী সমাজ কল্যাণ আন্দোলন, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, বাংলাদেশ খেলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আক্বিমুদ্দিন মজলিস, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জমিয়তুল হেদায়াহ মুভমেন্ট।
জোটসূত্র জানায়, নতুন এই জোটের কার্যালয় হিসেবে ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ৯ম তলা ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন এই জোট নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সব নির্বাচনেই ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে। যদিও বিগত দিনে এই জোটের কোনও সংগঠনকেই সক্রিয়ভাবে রাজপথে বা সভা সেমিনারে দেখা যায়নি। নিবন্ধিত দল হিসেবে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের নাম থাকলেও দলটির অবস্থান পরিষ্কার করা হয়নি।