বার্তা ডেক্সঃঃ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে খুন, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যেসব বাঙালি পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, তাদের তালিকা সংগ্রহ করে তা রক্ষণাবেক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে সংরক্ষিত স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহ করতে বলেছি’। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আধা সরকারিপত্র (ডিও লেটার) দেয়ার কথা জানানো হয়। বৈঠকে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মাণাধীন ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। ২৮ মে ওই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এ সময় ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের বাস্তবায়ন দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য বলে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটি সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ও কাজী ফিরোজ রশীদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মাণাধীন ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে জানানো হয়, ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও দলির স্বাক্ষরের উজ্জলতম স্মৃতিকে সংরক্ষণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন ও ঘটনাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা এবং কোমলমতি শিশুদের জন্য বৃহত্তর আকারে শিশু পার্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের জানান, কমিটির পক্ষ থেকে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর সরেজমিনের পরিদর্শনের পর অন্যান্য নির্দেশনা দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, বৈঠকে আলোচনা শেষে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে থানা, মহাকুমা ও জেলা প্রশাসন থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনকারী রাজাকারদের তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও পরবর্তীতে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে তার একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, পাকিস্তান সরকারের বেতনভোগী ওই সময়কার রাজাকারদের তালিকা যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হবে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সংসদীয় কমিটিকে। কমিটির আগের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অনুবিভাগে সংরক্ষিত রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনকারী রাজাকারদের তালিকা সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ অনুযায়ী কমিটির আগের বৈঠকে রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও সংগঠন এবং ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করে তাদের আসনগুলো অবৈধভাগে শূন্য ঘোষণা করে তাদের স্থলে যাদেরকে সদস্য করা হয়েছিল, তাদের নামগুলো স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রস্তুত ও সংরক্ষণে আইন সংশোধনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কার্যপত্রে দেখা যায়।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn