‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ বইটিতে জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান শব্দ ব্যবহার করায় দুঃখ প্রকাশ করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন এয়ার ভাইস মার্শাল অবসরপ্রাপ্ত এ কে খন্দকার (বীর উত্তম)। শনিবার (১ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আমার লেখা বই ‘১৯৭১ ভেতরে বাইরে’ ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে ‘প্রথমা প্রকাশনী’ থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির ৩২ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লিখিত বিশেষ অংশ ও বইয়ের আরও কিছু অংশের প্রতি সারাদেশে প্রতিবাদ ওঠে। সেখানে লেখা ছিল, “বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণেই যে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল তা আমি মনে করি না। এই ভাষণের শেষ শব্দগুলো ছিল ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’। তিনি যুদ্ধের ডাক দিয়ে বললেন ‘জয় পাকিস্তান’!…….।” তিনি জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেন, “এই অংশটুকুর জন্য দেশপ্রেমিক অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই তথ্যটুকু যেভাবেই আমার বইতে আসুক না কেন, এই অসত্য তথ্যের দায়ভার আমার এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে কখনও ‘জয় পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বলেননি। তাই আমার বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার উল্লিখিত বিশেষ অংশ সম্বলিত পুরো অনুচ্ছেদটুকু প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং একই সঙ্গে জাতির কাছে ও বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।”

প্রথমা প্রকাশনীর কাছে বইয়ের ৩২ নম্বর পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনর্মুদ্রণ দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৯০ বছর। আমার সমগ্র জীবনে করা কোনও ভুলের মধ্যে এটিকে আমি একটি বড় ভুল বলে মনে করি। গোধূলি বেলায় দাঁড়িয়ে পড়া সূর্যের মতো আমি আজ বিবেকের তাড়নায় দহন হয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মার কাছে ও জাতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। আশা করি প্রথমা প্রকাশনী আমার বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠার বিতর্কিত অংশটুকু বাদ দিয়ে পুনর্মুদ্রণ করবে।’ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কে খন্দকারের পক্ষে তার সহধর্মিণী ফরিদা খন্দকার বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মতিউর রহমান সাহেবকে আমি অনুরোধ করেছিলাম আপনি কি বিষয়টি পড়ে দেখেননি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি পড়ি না, আমাদের লোক থাকে। তারা লেখার গ্রামার এবং বানান দেখে। এছাড়া আমরা খেয়াল করি না।’ তারপরও আমি চেষ্টা করেছিলাম সংশোধনের, কিন্তু কিছু লোক আমাকে করতে দেয়নি। আমি কোনও ঝগড়া-ঝাঁটির মধ্যে যেতে চাই না।’’ পরে সাংবাদিকদের চাপের মুখে তিনি বলেন, “তাজউদ্দীন আহমেদের পিএস মঈদুল হাসানসহ আরও বেশ কিছু লোক এসেছিল। তারা বেশ কিছুদিন পাহারা দিয়ে রেখেছিল যেন সংশোধন করতে না পারি। মঈদুল হাসান বলেছিল, ‘গুলি তো ছেড়ে দিয়েছো, এখন কি গুলির পিছে দৌড়াবা’।”

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn