বার্তা ডেক্সঃঃ বাংলাদেশি তরুণের নাম আই. জে.। সে বসে ছিল গত অক্টোবরে একজন দন্ত চিকিৎসকের দপ্তরে। ছেলেটি ভেবেছিল তার দাঁতের চিকিৎসা হবে। সেজন্য তার দাঁত পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং বাস্তবেও সে তাই দেখল। চিকিৎসক তার দাঁত পরীক্ষা করলেন। তার দাঁত পরিষ্কার করলেন। এরপর গত জুলাইয়ে অবৈধভাবে মার্কিন সীমান্ত লঙ্ঘনের দায়ে তাকে যে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল, সেখানেই আবার পাঠিয়ে দেয়া হলো। লস অ্যানজেলেস টাইমস গত ২রা জুন এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে প্রকৃতপক্ষে ওই ছেলেটিকে দাঁতের চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে আসা হয়নি। মার্কিন সরকার জানতে চেয়েছিল, আই.জে. নামের যে তরুণ অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার বয়স তার দাবি অনুযায়ী সত্যিই ১৬ বছর নাকি সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক।
সাম্প্রতিক দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সীমান্ত পথে অবৈধভাবে যেসব দেশের অভিবাসীরা ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সে কারণে দাঁত পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের হারও বেড়ে গেছে। গত অক্টোবর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত টেক্সাস সীমান্ত পথে ঢোকার চেষ্টাকালে ধরা পড়া দেড়শ জনের বেশি বাংলাদেশী নিজেদের নাবালক দাবি করেছে। তারা আসলে প্রাপ্ত বয়স্ক বলে সনাক্ত হয়েছে। আই. জে. যদিও পরীক্ষায় নিজেকে নাবালক হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে, কিন্তু অপর তিন বাংলাদেশীর ভাগ্য এখনও অনিশ্চিত। ২০১৮ সালের অক্টোবরে টেক্সাস সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়া তিন বাংলাদেশী তরুণের বয়স পরীক্ষা পর্ব এখনও শেষ হয়নি। তারা টেক্সাসের সানডিয়াগো এলাকা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথে ধরা পড়ে।
২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মার্কিন সীমান্ত রক্ষীরা বাংলাদেশীদের বিরাট ভিড় লক্ষ্য করেছে। এক বছরে ব্যবধানে বাংলাদেশীদের আগমন ১০৯ ভাগ বেড়ে তা ১২০৩ জনে উন্নীত হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশী নাবালকদের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ২২১ ভাগ। অর্থাৎ অবৈধভাবে ৩৯২ জন কিশোর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে গিয়ে অন্তরীণ হয়েছে।  যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, এর কারণ হলো জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব, তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি, একটি অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সর্বোপরি একটি উন্নত জীবনের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ার মানসিকতা। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মারিয়ম হিলিন একজন ফেডারেল ফিল্ড স্পেশালিস্ট। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশী অভিবাসীরা ধরা পড়ার পরে তাদের বয়স যা দাবি করছেন তার সঙ্গে তাদের পাসপোর্টে উল্লেখিত বয়সের তারতম্য রয়েছে। আর যেসব বয়সের তারিখ পাসপোর্টে লেখা, সেটা তাদের জন্ম তারিখ থেকে আলাদা।  লস অ্যানজেলেস টাইমসের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয় অবৈধভাবে সীমান্ত পথে যারা ঢোকার চেষ্টা করেছে তাদের বিষয়ে এমন দাঁত পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি আগে দেখা যায় নি। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন অবৈধভাবে সীমান্তে অনুপ্রবেশের বিষয়ে যে কঠোর মনোভাব দেখিয়ে চলেছে, এই দাঁত পরীক্ষা তারই একটি অংশ।  তবে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফরেনসিক টেস্টের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি একটি বিতর্কিত প্রক্রিয়া। তাই পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি আর একটি নতুন আইনি লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি করেছে ।
কারণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আইন শুধুমাত্র ফরেনসিক টেস্ট এর মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের ধারণাকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে।
আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, অন্তত তিনটি ঘটনায়, যার মধ্যে বাংলাদেশি আই. জে. রয়েছে, সেখানে বিচারকদের আদেশে নাবালকদেরকে প্রাপ্তবয়স্কদের ডিটেনশন সেন্টার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গতবছর এভাবে গুয়েতেমালার একজন অভিবাসী অবৈধভাবে সীমান্তে প্রবেশ করার সময় ধরা পড়ে। তাকে একটি প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তরীণ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। আর সেখানে তাকে প্রায় এক বছর অতিবাহিত করতে হয়। কারণ এই সময়ে সে প্রমাণ করতে পারেনি যে তার বয়স আঠারোর কাছাকাছি হতে পারে । কিন্তু পরে তার অ্যাটর্নি তার জন্ম সনদের মাধ্যমে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন যে তাকে অন্তরীণ করার সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর।
বাংলাদেশী আই.জি.এর ক্ষেত্রে দাঁত পরীক্ষার ফলাফল হতে পারত গুরুতর। কারণ তার দাঁতের বিকাশ যেভাবে ঘটেছে তাতে তার মাত্র ১৮ বছর বয়স হয়েছে , সেটা ৮৭.৭০ ভাগ প্রমাণ করতে পেরেছে।  আই.জে. ধারা পড়ার বয়স নির্ধারণী একজন ম্যানেজারের কাছে মনে হয়েছিল, তাকে দেখতে ১৭ বছরের চেয়ে বয়স্ক মনে হয়েছিল। এবং সে বা তার মা অন্য কোনো বিকল্প উপায়ে তার বয়স নির্ধারণ করতে পারে নি। পরের মাসে আই. জে.’কে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টরা কিশোর কেন্দ্র থেকে একটা মিডিয়াম সিকিউরিটি প্রিজনে স্থানান্তর করে, যেখানে বয়স্ক অভিবাসীদের রাখা হয়। আই. জে . প্রায় পাঁচ মাস একটি অ্যাডাল্ট ডিটেনশন কেন্দ্রে কাটিয়েছে এবং আলাদাভাবে তাকে রাখা হয়েছিল ২৪ দিন। যখনই সে কোন একজন কারা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে, তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হয়েছে যে সে একজন নাবালক। তবে এক মাসের বেশি সময় কেটে গিয়েছে, যখন সে জানতে পেরেছে যে, শুধু দাঁতের কারণেই প্রাপ্ত বয়স্কদের সঙ্গে রাখা হয়েছে তাকে।  বাংলাদেশী তরুণ লস অ্যানজেলেস টাইমসকে বলেছেন, আমি একটা বিরাট স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু অ্যারিজোনা ভিত্তিক ফ্লোরেন্স ইমিগ্র্যান্ট এন্ড রিফিউজি রাইটস প্রজেক্ট মামলাটি নিয়ে যায় একজন ডিস্ট্রিক্ট জজের আদালতে। তখন বিচারক দেখেন যে, আই. জের. ক্ষেত্রে এজেন্টারা ফেডারেল আইন লংঘন করেছে। এমনকি তারা এজেন্সির গাইডলাইনও অমান্য করেছে।  গত এপ্রিল মাসে তাই বিচারক আই.জে.কে ও আরআর-এর নিরাপত্তা হেফাজতে ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। আদালতের ওই আদেশের ফলেই আই জে নিউইয়র্কে তার পরিবারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn