শাহ বদরুজ্জামান রুহেল, নিউইয়র্ক :: নিউইয়র্কে ব্রঙ্কসে বাড়ীর মালিক আর ভাড়াটিয়ার মধ্যকার দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে নিহত কমিউনটির পরিচিত মুখ ও বাংলাদেশী-আমেরিকান রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ‘কিং অব রিয়েল এস্টেট অব ব্রঙ্কস’ খ্যাত জাকির খান হত্যা মামলার রায়ে ঘাতক তাহার মাহরান (৫১)-কে ব্রঙ্কস সুপ্রীম কোর্টের বিজ্ঞ আদালত ১৫ বছরের কারাভোগের রায় দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার আদালত এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয় দন্ডিত ব্যক্তিকে ১০ বছর কারাগারে কাটাতে হবে এবং আরো ৫ বছর প্রবেশনে থাকবে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ব্রঙ্কসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত থ্রগসনেক এলাকার ভাড়া বাসার সামনে বাড়ীর মালিক মিসরীয় বংশোদ্ভূত তাহার মাহরান (৫১)-এর উপর্যুপরি ছুরিকাতে জাকির খান (৪৪) গুরুতর আহত হওয়ার পর তাকে স্থানীয় জ্যাকোবী হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার নির্মম মৃত্যুতে কমিউনিটতে শোকের ছায়া নেমে আসে।ঘটনার দিনই পুলিশ মাহরানকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডার অভিযোগ আনে। এদিকে ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বাদ জুমা দুপুর দু’টায় ব্রঙ্কসের ভার্জিনিয়া এভিনিউর পার্কচেস্টার জামে মসজিদে জাকির খানের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ব্রঙ্কস তথা নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে স্মরণকালের বৃহৎ এ জানাজায় শতসহস্র লোক অংশ নেন। পরবর্তীতে ২৬ ফেব্রুয়ারী রোববার জাকিরের মরদেহ সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তার গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে মরহুম জাকিরের মা-বাবার কবরের পাশেই তার মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত জাকির খান সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের সন্তান। ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ১৯৯২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করেন। জাকির খান নিউইয়র্কে এসে পড়াশুনা শেষ করে রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি ব্রঙ্কসে শীর্ষ স্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী হিসেবে কমিউনিটিতে পরিচিত লাভ করেন। নিউইয়র্কের ডেইলী নিউজ পত্রিকায় তাকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটি তাকে ‘কিং অব রিয়েল এস্টেট অব ব্রঙ্কস‘ নামে অভিহিত করে। জাকির খান মূলধারার পাশাপাশি কমিউনিটির নানা সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ডে’ পালনের অন্যত উদ্যোক্তাও ছিলেন তিনি। সাংসারিক জীবনে জাকির খানের এক মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। তারা স্কুল পড়ুয়া। পিতাকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল এ তিন শিশু। কোর্টের রায়ে জাকির খানের পরিবার সহ কমিউনিটির অনেকেই পুরোপুরি খুশী হতে পারেননি। তারা আশা করেছিলেন খুনী মাহরানের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবৎ জীবন জেল হবে।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn