শহীদনুর আহমেদ :: জাল ও ভুয়া কাগজ তৈরী করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন সম্পত্তি একজন ব্যক্তিকে ইজারা দেবার কথা বলে ৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক প্রতারক। ঐ প্রতারক ভূমি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফ হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ বিভাগের পরিচালক আফতাব আহমেদ, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব এম. আউয়াল, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাফর আহমেদ খান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মো. তাজুল ইসলামের নামেও স্বাক্ষর সম্বলিত ভুয়া প্যাড তৈরি করে প্রতারিত ব্যক্তিকে দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রতারণার শিকার ওই পরিবারটি এখন পথে বসেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একটি জরুরি মতবিনিময় সভায় নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার বড়কাশিয়া গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে সহযোগিতা চান। তিনি জানান, তার আত্মীয় সিলেটের আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা অপু চৌধুরীর মাধ্যমে জানতে পারেন ২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মাহমুদ নগর এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন সরকারি পতিত জমি ইজারা দেওয়া হবে। অপু চৌধুরী এই সরকারি জায়গা ইজারা এনে দিতে পারবেন বলে উজ্জ্বল মিয়াকে জানান। ইজারা বাবত তিনি ধাপে ধাপে অপু চৌধুরীকে ৩০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন।
প্রতারিত পরিবারকে দেওয়া ভুয়া কাগজপত্র থেকে দেখা যায়, ধর্মপাশা উপজেলার মাহমুদ নগর এলাকায় জেএল নং-১০৮, ৬৯, এসএ,খতিয়ান-১২০, বুজারত খতিয়ান-৫২৬, ডিপি-৬৭, এসএ দাগ নং-২০৫৪, আর এস ২০৬৫ নং দাগে ৪০ শতাংশ, একই এলাকার এসএ, জেএল নং-১০৮, এসএ খতিয়ান-১২০, দাগ নং ২০৫৫ ও ২০৫৬ মোট দুই দাগে ৩.৯১ একর, ২০৬৪ ও ২০৫৩ নং দাগে ১.৯০ একরসহ মোট ৬.২১ একর জমির বিভাগীয় আলাদা আলাদা ভুয়া কাগজ তৈরি করে ১০ বছরের ইজারার অনুমোদনপত্র দেন উজ্জ্বল মিয়াকে। উজ্জ্বল মিয়া জাল কাগজ যাচাই না করে এই ভুয়া কাগজকেই বিশ্বাস করে ধাপে ধাপে ৩০ লক্ষ টাকা দেন। কিছুদিন আগে সরেজমিন অফিসে এসে কাগজ দেখাতে এসে তিনি জানতে পারেন এগুলো ভুয়া কাগজ। বাস্তবের সঙ্গে মিল নেই। এ ঘটনায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।
জানা গেছে, সিলেটের আম্বরখানা এলাকার বাসিন্দা প্রতারক অপু চৌধুরী টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। অপু চৌধুরী প্রতারিত উজ্জ্বল মিয়ার গ্রামে বিয়ে করেছেন। এই পরিচয় সূত্রেই সে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সহজে। প্রতারণার শিকার উজ্জ্বল মিয়া বলেন, আমার এক ছেলেকে অনেক কষ্ট করে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। তার আয়ের সকল টাকা সে আমাকে ওই জমি ইজারা আনতে দিয়েছিল। এখন আমরা নিঃস্ব। সে যতগুলো কাগজ দিয়েছে সবগুলো ভুয়া। উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে হীরা মিয়া বলেন, আমি সিঙ্গাপুরে ছিলাম। আমার কষ্টার্জিত সকল টাকা বাবাকে ওই জমি ইজারা নিতে দিয়েছিলাম। আমার সহজ সরল বাবা কাগজ যাচাই না করে আমাদের আত্মীয় অপু চৌধুরীকে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এই প্রতারকের বিচার চাই।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূইয়া বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারি জমি লিজ দিতে পারেনা। প্রতারিত ব্যক্তি টাকা দেয়ার আগে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়তো। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারি কমিশনার মনজুর আলম বলেন, প্রতারিত ব্যক্তি জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়ায় ডিসি স্যার তাকে আশ্বাস দিয়েছেন সহযোগিতার। তিনি পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঙ্গেও কথাও বলেছেন। এই প্রতারককে যেখানেই দেখা যাবে সাথে সাথে জেলা প্রশাসক কার্যালয় বা পুলিশকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৫ বার