সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
শহীদনুর আহমেদ :: কথায় কাজে মিল নেই সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। কাগজের কলমে পাসপোর্ট সেবা নিতে সময়সীমা ও টাকার পরিমাণ উল্লেখ থাকলেও বাস্তবের সাথে এর মিল নেই। থাকছে না জরুরি পাসপোর্ট আর সাধারণ পাসপোর্টের মধ্যে পার্থক্য। বাড়তি টাকা ব্যয় করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট বুঝে পাচ্ছেন না বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নাগরিকরা। তাছাড়া পাসপোর্ট অফিসে কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা, দালাল, ট্রাভেল এজেন্সির দৌরাত্ম ও ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশি হয়রানিতে ভোগান্তির অভিযোগ করেছেন সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা। হয়রানি থেকে পরিত্রাণ ও নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত টাকায় পাসপোর্ট পাওয়াসহ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন ভোক্তভোগীরা।
গত ২৬ মে প্রতিবেদকের দাখিলকৃত তথ্য প্রাপ্তির আবেদনের জবাবে জানা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্টা অফিসে ৮ হাজার ২শত ৮২ টি পাসর্পোটের আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে পুলিশের প্রতিকুল প্রতিবেদনের জন্য ৭২টি, অফিস সমস্যার কারনে ১৩টি, ডেমো সমস্যার কারণে ১৫টি আবেদনপত্র নিষ্পত্তি সম্ভব হয়নি। তথ্যের জবাবে জানা যায়, সাধারণ পাসপোর্ট (ভ্যাটসহ) ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ও জরুরি পাসপোর্ট (ভ্যাটসহ) ৬ হাজার ৯০০ টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়। অনুকুল পুলিশ প্রতিবেদন ও ডাক যোগে প্রাপ্তি সাপেক্ষে সাধারণ পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ২১ দিন ও জুরুরি পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে ১১ দিন সময় লাগে। এছাড়া বাড়তি কোনো টাকা গ্রহণ করা হয় না বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন যাচাই করে দেখা যায় পাসপোর্ট অফিসের দেয়া তথ্যের সাথে মিল নেই বাস্তবের। সাধারণ পাসপোর্ট গ্রহণ করতে ২ থেকে আড়াই মাস ও জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ১ মাসেরও অধিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তাছাড়া পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত টাকায় পাসপোর্ট হাতে পাওয়া অসম্ভব বলে জানিয়েছেন ভোক্তভোগীরা। পুলিশ ভেরিফিকেশন ও কর্মকর্তাদের হয়রানি এড়াতে ট্রাভেল এজেন্সি ও দালালদের সহযোগিতা নিয়ে থাকেন গ্রাহকরা। এতে সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৬ হাজার ও জরুরি পাসপোর্টর এর ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয় তাদের। এ ক্ষেত্রে একটি সুবিধা হয় গ্রাহকদের। পাসপোর্ট অফিস ও ট্রাভেল এজেন্সির যোগসাজসে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়রানি থেকে মুক্তি পান তারা। তবে বেশি ভোন্তিতে পড়তে হয় ট্রাভেল এজেন্সি বা দালালের সাহায্য ছাড়া পাসপোর্ট করতে আসা লোকদের। অভিযোগ আছে তখন গ্রাহকদের সাথে পাসপোর্ট অফিসের লোকদের অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের। তবে কোনোমতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও আবেদন জমা দিতে পারলেও পাসপোর্ট বুঝে পেতে নানা বিড়ম্ভনায় পড়তে সরাসরি পাসপোর্ট করতে আসা নাগরিকদের। সরকারি খরচে পুলিশ ভেরিফিকেশনের তথ্য নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগও পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এর এদিক সেদিক হলেই পুলিশ প্রতিবেদন প্রতিক‚লেও যাওয়ার শঙ্কা থাকায় ভেরিফিকেশনের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ ।
মঙ্গলবার সরেজমিনে সুনামগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের গেটে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে দেখা যায় ছিাতক উপজেলার ভাতগাঁও ইউনিয়নের মন্ডলপুর গ্রামের সাজিদুর রহমানকে। তিনি জানান, প্রায় দুই মাস আগে একটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়েছিলেন। এ নিয়ে তিনি তিন বার পাসপোর্ট অফিসে আসার পর বুধবার পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন। তিনি জানান, পাসপোর্ট অফিসের নানা জটিলতার কারণে ট্রাভেলসের সহযোগিতায় পাসপোর্ট করতে ৬ হাজার টাকা খরচ করতে হয় তাকে। পাসপোর্ট গ্রহণ করতে দেখা যায়, ছাতক উপজেলার গবিন্দগঞ্জ এলাকার কবির উদ্দিনকে। সাধারন পাসপোর্টের জন্য ট্রাভেলসে মাধ্যমে দেড় মাস আগে আবেদন জমা দিয়েছিলেন তিনি। ২৩ দিনে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও দেড় মাসে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ায় সময় মতো পাসপোর্ট জমা দিতে না পারায় ভিসা চক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হবে তাকে। এদিকে পাসপোর্ট অফিসের হয়রানি সম্পর্কে মোজাম্মেল হক নামে দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা জানান, কয়েকমাস আগে আমার পাসপোর্ট রিনিউ করা জন্যে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম। পাসপোর্ট অফিসের লোকেরা আমাকে তেমন সহযোগিতা করেননি। অনেক বিড়ম্ভনা আর টাকা পয়সা খরচ করে আমাকে পাসপোর্ট রিনিউ করতে হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারি পরিচালক উত্তম কুমার দেব বলেন, আগে পাসপোর্টের জটের কারণে পাসপোর্ট পেতে কিছু বিলম্ব হতো। তবে এখন পাসপোর্ট অফিস আন্তরিক। পুলিশ রিপোর্ট পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যে আমরা পাসপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করি। আর সেবার মান পূর্বের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।