সরকার শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী
পুঁজিবাজারে ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের পুঁজিবাজার এখনও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীর ওপর নির্ভরশীল। শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠনে দৈনন্দিন লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি দক্ষ বিনিয়োগগোষ্ঠী গড়ে তুলতে দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ ঝুঁকি হ্রাস করতে বিএসইসি দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর আওতায় বিভাগীয় শহরগুলোতে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে তা সব জেলা সদরে অনুষ্ঠিত হবে।
পুঁজিবাজারে খেয়ালখুশিমতো বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মূলত বিনিয়োগকারীরাই হল বাজারের মূল চালিকাশক্তি। তাই তাদের সচেতনতার বিষয়টি শক্তিশালী পুঁজিবাজার গড়ার অন্যতম পূর্বশর্ত। তিনি বলেন, জেনে-বুঝে বিনিয়োগ করলে একদিকে যেমন প্রত্যেকের বিনিয়োগ ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা বাড়ে, অন্যদিকে নিশ্চিত হয় বাজারের স্থিতিশীলতা। এ বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে দেশব্যাপী বিনিয়োগ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের ওপর জোর দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীসহ, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের বিনিয়োগ দক্ষতা ও কলাকৌশল সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে ত্বরান্বিত করবে। এতে অন্যান্য প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার দিকটি অধিকতর নিশ্চিত হয়ে বিকশিত একটি পুঁজিবাজার গড়ে উঠবে এবং এ পুঁজিবাজার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিভিন্ন খাতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের অন্যতম উৎস হিসেবে আবির্ভূত হবে। পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত ডিভিডেন্ড আয়ের সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। নতুন ফিক্সড ইনকাম ফিন্যান্সিয়াল প্রোডাক্টসহ বিভিন্ন ধরনের বন্ড প্রচলনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শর্ট সেল এবং রিস্ক বেইস ক্যাপিটাল সংক্রান্ত দুইটি বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার বিএসইসির (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জনবল বৃদ্ধিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। বিএসইসির কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রণীত প্রণোদনা প্যাকেজের সফল বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারীর অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইমপ্যাক্ট ফান্ড গঠনের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমান সরকার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে স্মল ক্যাপিটাল প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এর ফলে ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানি পুঁজি উত্তোলন করতে পারবে এবং স্টার্ট-আপ কোম্পানির তালিকাভুক্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে তার সরকার নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বল্প-উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সব শর্ত পূরণ করেছে।
গত এক দশকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গড় হার সাড়ে ৬ শতাংশের ওপরে এবং গত অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩-২৪ সালের মধ্যে আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২১ শতাংশ। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশে রাখা সম্ভব হয়েছে।’ সরকারপ্রধান বলেন, প্রাইসওয়াটার হাউস কুপারসের রিপোর্ট অনুযায়ী- ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে ২৮তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি পুঁজিবাজারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ও বিনিয়োগে অংশীদার করা সম্ভব। কারণ যত বেশি মানুষ পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত হবেন, আমাদের শিল্পায়ন তত বেশি ত্বরান্বিত হবে। অনুষ্ঠানে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ এবং বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. মো. খায়রুল হোসেন অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন। সেমিনারে দেশের উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকা শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। সেমিনারে ভারত, জাপান, ফিলিপাইন, নেপাল, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং আইসল্যান্ডের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।