তাহিরপুরে গলা কাটার গুজবে আতঙ্ক
এম.এ রাজ্জাক, তাহিরপুর :: পদ্মা সেতুতে শিশুর কাল্লা লাগার গুজবে বেশ কয়েকদিন ধরে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার প্রতিটি গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে উপজেলার হাওর ও সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এ গুজব মহামারি ধারন করছে। রাতে আধারে হাওরে ইঞ্জিল চালিত নৌকা অথবা সীমান্তবর্তী রাস্তাঘাটে মোটরসাইকেলের শব্দ শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন শিশুসহ তাদের মা বাবা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হাওর এলাকা ও সীমান্তবর্তী গ্রাামগুলোতে স্থানীয় যুবকরা বেশ কয়েকদিন ধরে রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন। রাতের আধারে হাওর পাড়ের গ্রামের নিকট ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা সীমান্তবর্তী গ্রামের রাস্তা ঘাটে মোটরসাইকেলের শব্দ শুনলেই তারা এক সঙ্গে খবরদার খবরদার বলে চিৎকার করে উঠছেন। শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের মুজরাই গ্রামের এক কলেজ ছাত্র জানান, শিশুর গলাকাটার ভয়ে তাদের গ্রামের লোকজন কয়েকদিন ধরে রাতে ঘুমাচ্ছেন না। রাত জেগে তারা সংগবদ্ধভাবে শিশুদের পাহারা দিচ্ছেন। অপরিচিত লোক দেখলেই তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামে অপরিচিত কেউ ভিক্ষা চাইতে গেলেও তাদের ভিক্ষা না দিয়ে ভয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
গত শনিবার রাতে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কলাগাও গ্রামে মতি মিয়া নামের এক প্রতিবন্ধী শিশুকে গলাকাটা চেষ্টার অভিযোগে জয়নাল হোসেন নামের এক যুবককে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে স্থানীয়রা। অপরদিকে একই রাতে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাও গ্রামে এক পাগলকে গণপিটুনি দিয়ে মারাত্মক আহত করেছে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ পাগলকে উদ্ধার করে তাহিরপুর সদর হাসপাতাল ভর্তি করেছে। তাহিরপুর সীমান্তবর্তী জঙ্গলবাড়ী গ্রামের আইনাল হক জানান, হাওর এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই শিশু থেকে বড়রা চমকে উঠছেন।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য হাসান মিয়া বলেন, শিশুর কাল্লা কাটার চক্র এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, শিশুদের অপহরণ করে হত্যা করে বস্তায় ভরে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে এমন গুজবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন হাওর এলাকা সহ সীমান্তবর্তী গ্রামের লোকজন। তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান এসব গুজবে স্থানীয় এলাকবাসীদের কর্ণপাত না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেছেন, এলাকায় সন্দেহভাজন কাউকে ঘুরাফেরা করতে দেখলে তাকে মারধর না করে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়ীতে জানানোর জন্য। তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলার সব ইউনিয়নে মাইকিং করে আপামর জনসাধারণকে সচেতন করা হচ্ছে।