জগন্নাথপুরে চাল নিয়ে ‘চালবাজি’!
জগন্নাথপুর :: জগন্নাথপুরে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত দরিদ্র মানুষের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ-এর সিদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ চাল বিতরণে ওজনে কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। এছাড়া সিদ্ধ চাল নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ জগন্নাথপুরের সাধারণ মানুষ সিদ্ধ চাল খেয়ে অভ্যস্ত নন। এ এলাকার মানুষ আতপ চালেই ভরসা রাখেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটা জানার পরও কেন সিদ্ধ চাল বিতরণ করা হলো, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য গোদাম সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদ উপলক্ষে জগন্নাথপুর পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের ২১ হাজার মানুষের মধ্যে জনপ্রতি ১৫ কেজি করে মোট ৩১৫ টন সিদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে অনেক স্থানে ১৫ কেজির বদলে ১০ কেজি চাল বিতরণের অভিযোগ করেছেন সুবিধাভোগীদের অনেকেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুবিধাভোগীদের মধ্যে অনেকে সরকারি সিদ্ধ চাল নিয়ে অন্যদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে আতপ চাল কিনে নিয়েছেন। এতে লাভবান হয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তবে আতপ চাল বিতরণ করা হলে এমনটা হতো না। এছাড়া সরকারি বরাদ্দকৃত সিদ্ধ চাল সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর খাদ্য গোদাম থেকে সংগ্রহ করে এনে জগন্নাথপুরে বিতরণ করা হয়েছে। অথচ জগন্নাথপুর থেকে সংগৃহিত আতপ চাল বিতরণ করা হলে স্থানীয়রা উপকৃত হতেন বলে মনে করছেন অনেকেই। আতপ চাল পেলে সুবিধাভোগীদেরও সমস্যায় পড়তে হতো না। এছাড়া চাল বিতরণ করা হয়ে গেলে জগন্নাথপুর খাদ্য গোদামের জায়গা খালি হতো।
জগন্নাথপুর পৌর এলাকা ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সুবিধাভোগী নারী-পুরুষের সাথে আলাপ হলে তারা বলেন, ‘আমরা জগন্নাথপুরের মানুষ সিদ্ধ চাল খাই না। আমরা আতপ চাল খাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এটা জেনেও সিদ্ধ চাল দিয়েছেন। আমরা গরীব মানুষ হওয়ায় নিয়েছি। এছাড়া আমাদের অনেককে ১৫ কেজির বদলে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।’ সুবিধাভোগী এসব ব্যক্তিদের কেউই ভয়ে নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী ছমির উদ্দিন সুমন বলেন, ‘জগন্নাথপুরের মানুষ সিদ্ধ চাল পছন্দ করেন না। তা জেনেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে কারণে অনেকে সরকারি সিদ্ধ চাল বিক্রি করে আতপ চাল কিনে নিয়েছেন। যদি আতপ চাল বিতরণ করা হতো মানুষ সব দিক থেকে উপকৃত হতেন।’ জগন্নাথপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গোদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আবদুল হান্নান কামাল বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সুনামগঞ্জের মল্লিকপুর থেকে এনে জগন্নাথপুরে ভিজিএফ এর সিদ্ধ চাল বিতরণ করা হয়েছে।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জগন্নাথপুর থেকে সংগৃহিৃত আতপ চাল বিতরণ করা হলে গোদামে জায়গা সংকট অনেকটা দূর হতো এবং মানুষ আরো উপকৃত হতেন।’ জগন্নাথপুর পৌরসভার মেয়র আবদুল মনাফ বলেন, ‘জনপ্রতি ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। কোথাও চাল কম দেয়ার অভিযোগ পাইনি।’ যদিও প্যানেল মেয়র শফিকুল হক বলেন, ‘তালিকাভুক্ত লোকজনকে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে অনেক সময় বিতরণ শেষে অতিরিক্ত কিছু চাল তালিকাবিহীন গরীব লোকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকে কম পেতে পারেন।’ এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম মাসুম বলেন, ‘সরকারি ভিজিএফ এর চাল জনপ্রতি ১৫ কেজি করে দেয়ার কথা। এখানে কাউকে চাল কম দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’