রোহিঙ্গা ইস্যুতে দু’দফা অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছে মিয়ানমার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব বিবেককে সোচ্চার হবার পাশাপাশি মিয়ানমারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্যে আন্তর্জাতিক আদালতে সোপর্দ করা জরুরী বলে মন্তব্য করেছেন এ নিয়ে কর্মরতরা। জাতিসংঘে চীন, বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের বৈঠকের সূত্র ধরে অবশ্য কেউ কেউ গভীর আশায় অপেক্ষা করছেন শান্তিপূর্ণ সমাধানে। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন ক্যাটাগরিকেলী বলেছেন, পরপর দু’দফা তারা (মিয়ানমার) সসম্মানে রোহিঙ্গাদের নিজ বসতভিটায় প্রত্যাবর্তনের অঙ্গিকার ভঙ্গ করেছেন। ড. মোমেন গত দু’বছরের বিভিন্ন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে শক্তিশালী ভ’মিকায় থাকলেও বাস্তবে তার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। ড. মোমেন বলেন, ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভরনপোষণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-সহায়তা সবচেয়ে বেশী। আরো কটি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের পাশে থাকলেও প্রাণের ভয়ে বাস্তুভিটা ত্যাগে বাধ্য রোহিঙ্গাদের সম্মানের সাথে নাগরিকের অধিকারসহ নিজ বসতভিটায় ফিরে যাবার পরিবেশ তৈরীতে সক্ষম হয়নি। অধিকন্তু নোবেল বিজয়ী অং সান সু কী সম্প্রতি বলেছেন যে, ঐ ১১ লাখ রোহিঙ্গার সকলেই বাংলাদেশী, তারা মিয়ানমারের অধিবাসী নয়। আর এভাবেই পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।
‘গ্লোবাল সেন্টার ফর দ্য রেসপন্সিবিলিটি টু দ্য ইউএন’র সহায়তায় বাংলাদেশ মিশনের উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের পরিক্রমা’ শীর্ষক এ সেমিনার মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায়। কো-হোস্ট সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. সাইমন এডামের সঞ্চালনায় প্যানেলিস্ট হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল জাস্টিস সেন্টারের প্রেসিডেন্ট আকিলা রাধাকৃষ্ণান এবং গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর এম তাম্বাডো। আইনমন্ত্রী আবুবকর এম তাম্বাডো সম্প্রতি কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা উপস্থাপনকালে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বরতার কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি জাতিসংঘের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করতে। মিয়ানমার যদি সভ্যসমাজের অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয় তাহলে এ বছরই আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক চমৎকার, তাই আমরাও আশাবাদি স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে। চীন এবং ভারতও সচেষ্ট রয়েছে এ ইস্যুর শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে। যদিও আলাপ-আলোচনার মধ্যেই অতিবাহিত হলো দুটি বছর। এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমারে এখনও জাতিগত নিধন অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে এহেন বর্বরতার জন্যে চিহ্নিত সেনাবাহিনীর বেশ ক’জন অফিসারকে নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু মিয়ানমার প্রশাসনের বোধোদয় ঘটছে না। এ পরিস্থিতির অবসানে বাংলাদেশের ক’টনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টদের অন্যতম জন এফ কেনেডির সমাধিস্থলে লেখা একটি বাক্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ড. মোমেন বলেন, যে কোন ভালো কাজের জন্যে একজন মানুষ যদি সোচ্চার হন, তাহলে সেখানে লোকসংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ে। এভাবে অসংখ্য মানুষ সোচ্চার হলে যে কোন স্বৈরাচারের ভীতও তছনছ হতে বাধ্য। সে আলোকেই আমরা বিশ্বজনমত জোরদারের পথেও রয়েছি। জাতিসংঘে চলতি অধিবেশনের বিভিন্ন পর্বে সভা-সিম্পোজিয়ামেও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ উঠছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরব রয়েছেন অবিলম্বে এ পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে যাবার জন্যে। বিশ্বজনমত তৈরীর পরিক্রমাতেই বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এ সেমিনার হলো। এতে বিভিন্ন দেশের ক’টনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।