দুর্নীতি এখন থামাতে হবে-প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান অভিযানকে খুব ভালো ও প্রশংসনী উদ্যোগ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, যে হারে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে, দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না। এটাকে এখন ধরতে হবে, এটাকে এখন থামাতে হবে। এটা যেই হোক। প্রেসিডেন্ট বলেন, আজকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তো আপনারা জানেনই। তবে বর্তমান সরকার একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে যে, সমাজ থেকে দুর্নীতি উচ্ছেদ করার জন্য। আমিও মনে করি, এটি খুব ভালো ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আসলে যে হারে বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হচ্ছে, দুর্নীতির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না। এটাকে এখন ধরতে হবে, এটাকে এখন থামাতে হবে। এটা যেই হোক। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, তার নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ বলুন অর্থাৎ যে যে দলই করুক না কেন, দুর্নীতি যে করবে তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা দেশকে মোটামুটি দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি, তাহলে আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যাবো। ইনশাআল্লাহ। এটি নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
গতকাল বুধবার বিকালে তাড়াইল মুক্তিযোদ্ধা সরকারি কলেজ মাঠে তাড়াইল নাগরিক কমিটি আয়োজিত এক সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। সমাবেশে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনারা যারা জনগণের প্রতিনিধি, জনগণ অনেক আশা করে আপনাদের ভোট দিয়েছে। যে যে অবস্থানে আছেন, সে অবস্থানে থেকে মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন। তাদের কথা শুনবেন। যতটুকু সম্ভব তাদেরকে ইজ্জত দিবেন। ইলেকশনে পাশ করার পরই যদি চেহারা বের হয়ে যায়, স্বরূপ বের হয়ে যায়, আমি মনে করি, এটা খারাপ দিক। নির্বাচনের সময় মানুষের সাথে যে রকম আচরণ করা হয়, নির্বাচনের পরও একই রকম আচরণ করা হলে মানুষ খুশি হবে। মানুষ দোয়া করবে।প্রেসিডেন্ট স্মৃতিচারণ করে বলেন, সেই পুরুড়া হাইস্কুল মাঠে তখন লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছিল। সেখানে আমি একাই সোয়া দুই ঘণ্টা বক্তৃতা দিয়েছিলাম। মিটিং শেষে যখন রাস্তায় মানুষজনের সাথে দেখা হয়, মুরুব্বীরাও তখন সালাম দেয় আর বলেন, ‘ভাটির শার্দুল’ সাব আপনি কেমন আছেন? তখন জানতাম না, ’৭০ এ আমি ইলেকশন করব। ’৭০ এ যখন ইলেকশন করলাম তখন দেখা গেল, পোস্টারের মধ্যেও একই টাইটেল। তখন আমি অ্যাডভোকেটও হইনি। পোস্টারে লেখা হয়, প্রার্থী ভাটির শার্দুল মো. আবদুল হামিদকে ভোট দিন। এই হয়ে গেলাম ‘ভাটির শার্দুল’। ‘ভাটির শার্দুল’ উপাধিটা আমার তাড়াইল থেকেই পাওয়া, তাড়াইল থেকেই দেওয়া, তাড়াইল থেকেই শুরু।
প্রেসিডেন্ট ১৯৭০ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা ছিল ইটনা, অষ্টগ্রাম, নিকলী ও তাড়াইল এই চারটি থানা। মিঠামইন তখন পূর্ণাঙ্গ থানা হয়নি। আমি ভোটের দিকে চার থানার মধ্যে তাড়াইলের প্রথম হয়েছিলাম। সুতরাং তাড়াইলের সাথে আমার আলাদা একটি সম্পর্ক রয়েছে। সারাজীবন এটা আমার মনে আছে এবং মনে থাকবে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে আমি আপনাদের সহযোগিতা পেয়েছি। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, সব দলের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। আমি আজকে এসেছি বক্তৃতা দেয়ার জন্য নয়, আপনাদের দেখার জন্য এসেছি। বক্তৃতা দেবেন যারা রাজনীতি করেন তারা। আমি এখন রাজনীতি করি না। আমি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে আজকে এসেছি। কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পিপি শাহ আজিজুল হক, তাড়াইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম ভূঞা শাহীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন লাকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন, নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও তাড়াইল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক ভূঞা মোতাহার।
এর আগে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে এক সপ্তাহের সরকারি সফরের প্রথম দিন বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে তাড়াইল উপজেলার শামুকজানি মাঠের হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। হেলিপ্যাড থেকে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে যান। সেখানে প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পরে তিনি উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নবনির্মিত স্বাধীনতা ‘৭১ ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে তিনি সুধী সমাবেশে যোগ দেন। সুধী সমাবেশ শেষে বিকালে প্রেসিডেন্ট কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের উদ্দেশ্যে তাড়াইল ত্যাগ করেন। ১৫ই অক্টোবর পর্যন্ত তিনি তাড়াইল ও কিশোরগঞ্জ সদর ছাড়াও নিজের সাবেক সংসদীয় এলাকার তিন উপজেলা মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম সফর করবেন।