জাপানে ঘূর্ণিঝড় হাজিবিসের আঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮
জাপানে ঘূর্ণিঝড় হাজিবিসের আঘাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। জাপানের গণমাধ্যম এনএইচকে ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, হাজিবিসের আঘাতে কানাগাওয়া, টচিগি, গুনমা, ইওয়াতে, মিয়াগি, ফুকুশিমা, চিবা ও সাইতামা প্রশাসনিক অঞ্চলে কমপক্ষে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২ লাখ ৭০ হাজার ঘরবাড়ি বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রোববার বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, গত কয়েক দশকের মধ্যে জাপানে আঘাত হানা সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হাজিবিস। শনিবার টোকিওর দক্ষিণে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টির গতি ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি থেকে বিভিন্ন এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। কমপক্ষে ১৪টি এলাকার নদীর তীর উপচে পানিতে প্লাবিত হয় আশপাশের আবাসিক এলাকা। কোথাও কোথাও ভূমিধসও হয়। হাজিবিস এখন উত্তরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি আজ দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে জাপানের নাগানোতে। চিকুমা নদীতে জলোচ্ছ্বাসের কারণে আশপাশের এলাকা তলিয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যায়।এখন পর্যন্ত ৬০ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উদ্ধার-তৎপরতা চালাতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে জাপানের সেনাবাহিনী। বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকে তোয়ালে নেড়ে দুর্গত মানুষ সেনাবাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নাগানো শহরের জরুরি পরিষেবা বিভাগের কর্মকর্তা ইয়াসুহিরু ইয়ামাগুচি জানিয়েছেন, শনিবার রাতে তাঁরা ৪২৭টি বাড়ি থেকে ১ হাজার ৪১৭ জনকে সরিয়ে নিয়েছেন। কত বাড়ি বন্যাকবলিত, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাঁরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, প্রচণ্ড হাওয়ায় বাড়ির ছাদে থাকা কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী উড়ে যাচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কারও কারও মৃত্যু হয়েছে ভূমিধসের কারণে। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় কেউ কেউ গাড়িতে আটকে পড়ে মারা গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়ার পর লাখো মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছিল। তবে মাত্র ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি হিসেবে অনেক বাসিন্দা খাবার মজুত করে রাখে। ফলে সুপার মার্কেটগুলোতে পণ্য স্বল্পতা দেখা দেয়। টোকিওর পশ্চিমাঞ্চলের হাচিওজি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া স্থানীয় এক বাসিন্দা জেমস বাব বলেন, তাঁর বাড়ির পাশের নদীর পানি উপচে পড়ায় তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমার শাশুড়ি চলাচল করতে অক্ষম। আমাদের বাড়ি হয়তো ভেসে গেছে।’ আশ্রয়কেন্দ্রে তাঁকে একটি কম্বল ও বিস্কুট দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। টোকিওর উত্তরে টচিগিতে বসবাস করেন অ্যান্ড্রু হিগিংস নামের ইংরেজি বিষয়ের একজন শিক্ষক। জাপানে তিনি সাত বছর ধরে রয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে মনে হচ্ছে, এবার ঘূর্ণিঝড়টিকে জাপান খুব বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। লোকজন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রচুর জিনিস মজুত করে রেখেছে অনেকে। জাপানে অনুষ্ঠিত রাগবি বিশ্বকাপের গতকালের ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ড-ইতালি ম্যাচ দুটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাতিল করে ড্র ঘোষণা করা হয়। রাগবি বিশ্বকাপের ৩২ বছরের ইতিহাসে ম্যাচ বাতিল হওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম। নামিবিয়া-কানাডার আজকের ম্যাচটিও বাতিল করে ড্র ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী স্বাগতিক জাপান ও স্কটল্যান্ডের ম্যাচটি আজ অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র-টংগা ও ওয়ালেস-উরুগুয়ে ম্যাচ দুটিও আজ নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। অনেকগুলো বুলেট ট্রেন সার্ভিস ও টোকিওতে কয়েকটি রুটের বেশির ভাগ মেট্রোর চলাচল গতকাল বন্ধ রাখা হয়। টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর ও চিবার নারিতা বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট স্থগিত করা হয়। ১৯৫৯ সালে জাপানের ভয়াবহ এক ঝড় মোকাবিলার ইতিহাস রয়েছে। ওই বছর ৩০৬ কিলোমিটার বেগে ঝড় আঘাত হেনেছিল। ওই ঝড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল বা নিখোঁজ ছিল। জাপানে বছরে ২০ টির মতো টাইফুন হয়। তবে বর্তমান মাত্রায় টোকিওতে ঝড়ের আঘাত হানার ঘটনা বিরল।