ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার দাবি নেতাদের
সর্বশেষ ১১ অক্টোবর যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক হলেও তাতে অংশ নেননি ওমর ফারুক। নেতা-কর্মীদের ফোনও ধরছেন না তিনি। এই অবস্থায় জাতীয় সম্মেলনের (২৩ নভেম্বর) বিষয়ে আলোচনা করতে রোববার গণভবনে যাচ্ছেন যুবলীগের নেতারা। তবে ওই বৈঠকে যেতে পারবেন না ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওন। ক্যাসিনো অভিযান শুরু হওয়ার পর নুরুন্নবীর ব্যাংক হিসাবও তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্মেলন ও সামগ্রিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নির্দেশনা নেওয়া হবে। বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরী যাতে অংশ না নেন, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে তাঁকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৬৪ বছর বয়সে ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যান হন ওমর ফারুক। কাউন্সিল না হওয়ায় সাত বছর ধরে একই পদে রয়েছেন তিনি। তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ থেকে শুরু করে তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেছেন একসময়। এরশাদের শাসনামলে জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। যুবলীগের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানান, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে বহিষ্কার করা হয় ৭ অক্টোবর। ১০ দিন পরও তাঁর পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পিয়ন থেকে দপ্তর সম্পাদক হয়ে বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া কাজী আনিসুর রহমান আনিসের খোঁজ নেই ২৫ দিন ধরে। ১১ অক্টোবর তাঁকে বহিষ্কার করা হলেও এই পদে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
যুবলীগ সূত্র জানায়, ক্যাসিনোতে অভিযান শুরুর দিন (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগের চেয়ারম্যান মিরপুরে সংগঠনের এক অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘এত দিন আঙুল চুষছিলেন?’ গত ২০ সেপ্টেম্বরও উত্তরার সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। এরপর থেকে তাঁকে সংগঠনের কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি। যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন সদস্য জানান, প্রচলিত রেওয়াজ অনুযায়ী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান। এখন ওমর ফারুক চৌধুরীর বিকল্প হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে কয়েকজন আগেও বিভিন্ন সময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া কাউকে আহ্বায়ক করেও এই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ বিষয়ে যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তাধীন থাকায় চেয়ারম্যান নিজ থেকেই সরে আছেন। এটাই সৌজন্য। যে কারণেই হোক, তিনি দায়িত্ব পালনে অপারগ আছেন। এমন অবস্থায় সম্মেলন পরিচালনা করতে গঠনতান্ত্রিকভাবে কাউকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
১১ অক্টোবর সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে ওমর ফারুকের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন কয়েকজন নেতা। কেউ কেউ সাধারণ সম্পাদকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। চারজন নেতা জানান, চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে গাল দিতেন নেতা-কর্মীদের। তাঁর সঙ্গে সরাসরি দেখা করা কিংবা আলাপ করার সুযোগ ছিল না। কাজী আনিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হতো। নেতা-কর্মীরা তাঁকে যুবলীগ চেয়ারম্যানের ‘ক্যাশিয়ার’ বলে জানে। ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের দায় যুবলীগের চেয়ারম্যানেরও। তাঁর আশ্রয়-প্রশ্রয়েই এসব হয়েছে। যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালনা করা হলে সংগঠন এখন এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হতো না। এ পরিস্থিতিতে আনার দায় সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এড়াতে পারেন না। খবর: প্রথম আলো।