সুনামগঞ্জে মসজিদের ইমাম নিয়ে তীব্র উত্তেজনা, পুলিশ মোতায়েন
সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জ পৌর শহরের তেঘরিয়া বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আনোয়ার হোসেনে বিরুদ্ধে নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ এনে মসজিদ কমিটি তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও স্থানীয় একটি পক্ষের সহযোগিতায় জোরপূর্বক ইমামতি করে আসছেন। বিগত পাঁচ মাস ধরে এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিগত দুই জুম্মার নামাজের সময় মাওলানা আনোয়ারকে রাখা না রাখা নিয়ে বিবদমান দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজান চরমে পৌঁছালে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মসজিদ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। জোরপূর্বক ইমামতি করার প্রতিবাদে তেঘরিয়া এলাকার বেশিরভাগ মুসল্লি অন্যত্র নামাজ আদায় করছেন। এ নিয়ে দিন দিন পরিস্থিতি আরো উত্তেজনাকর হয়ে উঠায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। উত্তেজনা নিরসনে প্রশাসন, আলেম সমাজ ও ইমাম-মোয়াজ্জিন পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। জানা যায়, ২৪ মে তেঘরিয়া বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে তাবিলিগ জামাতে দলাদলি, ইমাম পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার, মারকাজের নামে ভূমি দখল, ইমামের দায়িত্ব নিয়ে নিয়মিত নামাজ না পড়ানোসহ নানা অভিযোগে প্রতিবাদ করেন সাধারণ মুসল্লিরা। এ নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হলে কয়েকজন আহত হন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন মসজিদ পরিচালনা কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা ডেকে মাওলানা আনোয়ারকে ইমাম ও খতিবের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। বিদায়ী সম্মানী হিসেবে তাঁকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করে কমিটি। মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে নতুন ইমাম ও খতিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে কমিটি। ইমাম ও খতিবের পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার এর তিন মাস পর ১৯ আগস্ট স্থানীয় কিছু যুবককে সংগঠিত করে এশার নামাজে ইমামতি করে মাওলানা আনোয়ার। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ক্রমেই পরিস্থিতি সংঘাত-সংঘর্ষের দিকে মোড় নিতে থাকে। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ১০ অক্টোবর রাজনীতিবিদ আব্দুল কাদির শান্তি মিয়া, প্রবীণ ব্যক্তিত্ব তাজিরুল ইসলাম, হাজী ফুরকান উদ্দিন মাস্টার, সুনামগঞ্জ পৌর কলেজের অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ, সমাজেসেবী দেওয়ান গণিউল সালাদীনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলীর বাসায় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মাওলানা আনোয়ারকে অব্যাহতি প্রদানের পূর্বের নেয়া সিদ্ধান্ত বহাল রেখে পরবর্তী জুমার নামাজ না পড়ানোর জন্য মসজিদ কমিটি ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ১১ অক্টোবরও কমিটি ও পঞ্চায়েতের সিদ্ধান্ত অমান্য করে জোরপূর্বক জুম্মার নামাজে ইমামতি করেন মাওলান আনোয়ার। এতে সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। জোরপূর্বক ইমামতি করার বিরুদ্ধে সাধারণ মুসল্লিরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবণতির আশঙ্কা তৈরি হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে থানা পুলিশের বিপুলসংখ্যক সদস্য মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। পরিস্থিতি অগ্রগতি না হওয়ায় শুক্রবারও জুম্মার নামাজের সময় মসজিদ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। সরেজমিন গিয়ে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মসজিদের পশ্চিমের সড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে। এ সময় তিনি বলেন, মসজিদের ইমাম সাহেবকে রাখা না রাখা নিয়ে স্থানীয় দুটি পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবণতি না হয় সেজন্য মসজিদ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে, জোরপূর্বক মাওলানা আনোয়ার হোসেন কর্তৃক তেঘরিয়া জামে মসজিদে ইমামতি করার প্রতিবাদে তেঘরিয়া এলাকার বেশিরভাগ মুসল্লি আশপাশের মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করছেন। প্রতিবাদে মসজিদ কমিটির সভাপতির পদ থেকে অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী পদত্যাগ করেছেন। ২১ সদস্য বিশিষ্ট মসজিদ পরিচালানা কমিটির ১৭ জন সদস্যই মাওলানা আনোয়ার হোসেনকে ইমাম ও খতিব পদে না রাখার পক্ষে। জোরপূর্বক ইমামতি করার পর থেকে তারাও মসজিদে নামাজ আদায় থেকে বিরত রয়েছেন।
তেঘরিয়া জামে মসজিদের সদ্য পদত্যাগী সভাপতি অ্যাডভোকেট শেরেনূর আলী বলেন, কমিটির সিদ্ধান্ত অমান্য করে মাওলানা আনোয়ার হোসাইন জোরপূর্বক ইমামতি করায় সংঘর্ষ এড়াতে আমি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। অভিযোগের ব্যাপারে মাওলানা আনোয়ার হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, শহরের তেঘরিয়া মসজিদে ইমামকে নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার জুমার মসজিদ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তিনি বলেন, আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিবদমান দুটি পক্ষ বসে বিষয়টি মিটমাট করে ফেলবেন।