জালিয়াতিতে ধরা পড়ায় এমপি বুবলীকে বহিস্কার
নরসিংদীর সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তামান্না নুসরাত বুবলীর পরীক্ষা ও নিবন্ধন বাতিল করে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ (পাস) পরীক্ষায় নিজে উপস্থিত না থেকে প্রক্সি পরীক্ষার্থী দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণের পর তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। রোববার সকালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) এক জরুরি সভায় বুবলীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাউবির উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মান্নান। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচিত হওয়া তামান্না নুসরাত বুবলী ২০১১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত নরসিংদীর পৌরসভার তৎকালীন মেয়র লোকমান হোসেনের স্ত্রী। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী সংসদ সদস্য বুবলী এইচএসসি পাস। তবে নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ কোর্সে ভর্তি হন। তবে বাউবির বিএ কোর্স এ তার হয়ে অন্যদের পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা সাংবাদিকের কাছে ধরা পড়ে। তিনি ঢাকায় থাকলেও তার হয়ে নরসিংদীতে বিএ পরীক্ষা দিতেন অন্যরা এমন সংবাদ একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, “বুবলী নিজে পরীক্ষা না দিয়ে পরপর ৮টি পরীক্ষায় তার পক্ষে প্রক্সি পরীক্ষার্থীরা অংশ নেয়। তবে শেষ দিনের পরীক্ষা দিতে গিয়ে হলে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন এক শিক্ষার্থী। সভায় সাংসদ তামান্নার সব পরীক্ষা ও রেজিস্ট্রেশন বাতিল, তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও ঘটনা তদন্তে বাউবির পক্ষে থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ডিন অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. আসাদুজ্জামান উকিল, স্টুডেন্ট সাপোর্ট সার্ভিসেস ডিভিশনের পরিচালক আনিস রহমান ও ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রের পরিচালক আহমেদ সেলিম। তদন্ত কমিটিকে তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সভায় আরও জানানো হয়, এ ব্যাপারে তামান্না নুসরাত ওরফে বুবলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটিতে তোলা হবে এবং পরে তা বোর্ড অব গভর্নেসে যাবে। সবশেষে তার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভায় জানানো হয়েছে, তামান্না নুসরাত বাউবির কোনো প্রোগ্রামে আর ভর্তি হতে পারবেন না। যারা প্রক্সি পরীক্ষা দিয়েছেন, তাদের পরিচয় বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হবে। তামান্না নুসরাতের এ ধরনের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেছে। ভিসি বলেন, নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ওই পরীক্ষার সমন্বয়ক। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কখনো কেন্দ্রে যাননি। অথচ পরীক্ষা চলাকালে তার প্রতিদিনই কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার কথা। কলেজের পক্ষ থেকে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে যথাযথ দায়িত্ব পালন করা হয়নি। কারও প্রবেশপত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কেন্দ্রে জানালে তাকে ডুপ্লিকেট প্রবেশপত্র সরবরাহ করা হয়। কিন্তু জিডি কপি দিয়ে এভাবে পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হয়নি। তার নিয়মও নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয়ভাবে যদি রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে টিকবে না। সেখানে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব হবে না।