চট্টগ্রাম-… দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। কক্সবাজার দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হিসেবে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। সেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সবাইকে আরো কাজ করতে হবে… বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রবর্তিত ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আদিতা বড়ুয়া। তিনি ২০১৩-১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের মার্কেটিং বিভাগ থেকে স্নাতকে (সম্মান) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন এবং সর্বোচ্চ নম্বর পান। বৃহত্তর  বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে একমাত্র আদিতা বড়ুয়া ওই পদক লাভের গৌরব অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২২ মার্চ তাঁর কার্যালয়ে আদিতাকে স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন। তিনি রাউজানের হোয়ারাপাড়া (ধুমারপাড়া) এলাকার প্রকৌশলী অধীর বড়ুয়া ও আলপনা বড়ুয়ার মেয়ে।

প্রসঙ্গত, উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশে উৎসাহিত করতে ২০০৬ সাল থেকে ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’ চালু করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জনকারীদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের ওই পদকের জন্য মনোনীত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাওয়ায় দারুণ খুশি আদিতা বড়ুয়া। আর আদিতার অর্জনে গর্বিত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষও। কীভাবে সম্ভব হলো এমন অর্জন? জবাবে আদিতা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। চট্টগ্রাম নগরীর অপর্ণাচরণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেছি। উচ্চ মাধ্যমিক পড়েছি সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে। এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছিলাম। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হব, তেমন কোনো লক্ষ্য ছিল না। প্রতিনিয়ত ভালো পড়ালেখা করেছি। এর ফল পেয়েছি। সবচেয়ে খুশি লাগছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক অর্জন করায়। এতে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা পেলাম। ’ তিনি মনে করেন, পরিশ্রম করলে সাফল্য ধরা দেবেই।

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবজনক এ অর্জনের জন্য কার অবদান সবচেয়ে বেশি? আদিতা বলেন, ‘অবশ্যই মা-বাবার। তাঁরা সবসময় চেয়েছেন আমি ভালো পড়াশোনা করি। ’ আদিতা জানান, পুরস্কার গ্রহণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশীর্বাদ জানিয়ে তাঁকে বলেন, ‘ভালো ফলাফল করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়নি। দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল। দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। কক্সবাজার দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হিসেবে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। সেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সবাইকে আরো কাজ করতে হবে। ’ শিক্ষকতার জন্য কক্সবাজারকে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে আদিতা বলেন, ‘কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দিন দিন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হচ্ছে।

এখানে শিক্ষকতার মাধ্যমে মেধার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে চাই। ’

কক্সবাজার বাংলাদেশের সেরা পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু সেই পর্যটননগরে শিক্ষার হার দেশের অন্য এলাকার তুলনায় বেশ কম। উচ্চশিক্ষার হার আরো কম! এ প্রসঙ্গে আদিতা বলেন, ‘কক্সবাজারে শিক্ষার হার হয়তো অন্য এলাকার তুলনায় কম। এখানে উচ্চশিক্ষার সুবিধা আরো কম। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি না থাকলে জেলার সাত উপজেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর চট্টগ্রাম বা অন্য শহরে দৌড়াতে হতো। এখন তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চরম প্রতিযোগিতা। সুতরাং কক্সবাজার অঞ্চলের অসংখ্য শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না। আবার নানা কারণে অভিভাবকরা দেড় শ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রামে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে পারেন না। এসব কারণে আগে এখানকার অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতো। ’ ‘গ্রিন প্রোডাক্ট’ বিষয়ে গবেষণা করছেন আদিতা। এ সংক্রান্ত তাঁর একটি প্রবন্ধ গ্লোবাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আদিতা ‘প্রধানমন্ত্রী পদক’ পাওয়ায় খুশি কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘বৃহত্তর চট্টগ্রামে একমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সেরা ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর স্ব্বর্ণপদক পেলেন। এটা অনেক গর্বের ও আনন্দের। ’কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সেক্রেটারি লায়ন মুজিবুর রহমান এবং ট্রাস্টি মাহবুবা সুলতানা শিউলী বলেন, আমরা শুরু থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদিতা বড়ুয়ার এ অর্জন আমাদের আরো একধাপ এগিয়ে নিল।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn