কলকাতার মেয়ে কিন্তু জীবনের প্রথম ছবিটা করলেন বাংলাদেশে। দারুণ ভাল অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা সত্ত্বেও অভিনয়ে এলেন কেন? এবেলা ওয়েবসাইটকে দিলেন এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার। তোমার তো দারুণ ভাল একটা অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে শুনেছি… কলকাতার মেয়ে রাতশ্রী দত্ত সম্প্রতি নায়িকা হয়েছেন বাংলাদেশের একটি ছবিতে। অথচ পড়াশোনা শেষ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ক্ষেত্রে কেরিয়ার শুরু করেছিলেন তিনি। আবার এ সবের পাশাপাশি তাঁর একটি সাংস্কৃতিক মননও রয়েছে। ‘রবি ও রথী’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের প্রযোজনাও করছেন। এবেলা ওয়েবসাইটের সঙ্গে দূরভাষে জমে উঠল বিশেষ সাক্ষাৎকার।

রাতশ্রী: আমি আসলে ইতিহাসে মাস্টার্স করে এমবিএ করেছি মার্কেটিং নিয়ে। একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনস এগজিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করতাম। মোটামুটি ভাবে দেড় বছর চাকরি করার পরে আমার মনে হয় যে চাকরিটা ঠিক আমার জন্য নয়। গান, নাচ, আঁকা এই সবকিছুই খুব ছোট থেকে ভাল লাগত। স্কুল-কলেজে থাকাকালীন পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গেই এই সবকিছুই চলত। তাই তখন এইসবের অনুপস্থিতির কষ্টটা আমার মধ্যে ছিল না। চাকরি করতে গিয়ে ওইগুলো থেকে একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমার মনে হল যে এই চাকরি আমার জন্য নয়, বরং যেটা আমার ভাল লাগে, সেই জায়গাতেই কাজ করি। তার পর থেকেই আমি মডেলিং শুরু করি, সঙ্গে অভিনয়।

এই সিদ্ধান্তটা কতদিন আগের?

রাতশ্রী: ২০১৪ সাল থেকেই মডেলিং-অভিনয় শুরু করি। আর আমার প্রথম ছবি রিলিজ কিন্তু বাংলাদেশে। ছবির নাম তুখোড়। প্রথমেই বাংলাদেশের ছবি কেন?

রাতশ্রী: আসলে আমি যেহেতু মডেল হিসেবে কাজ করতাম, তাই এখানে অভিনয়ের সুযোগটা সেভাবে পাইনি। তাই বাংলাদেশ থেকে যখন প্রথম আমাকে ছবিটা অফার করে, যেহেতু গল্পটা ভাল ছিল আর আমি ভীষণ ভাবে অভিনয় করতে চাইতাম, তাই অফারটা আমি নিয়ে নিই। আমি কিন্তু চেষ্টা করেছি আমার কাজের মাধ্যমে কলকাতাকে রিপ্রেজেন্ট করতে। এই মুহূর্তে ওখানে যারা কাজ করছেন, শ্রাবন্তী বলো বা পাওলি দাম বলো, সবাই কিন্তু একটা ব্র্যান্ড নিয়ে গেছে ওখানে আর আমার ক্ষেত্রে ঠিক উলটোটা। বলা যায় অভিনেত্রী তকমাটা আমি বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসেছি।

ওখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা ভাল তো?

রাতশ্রী: অভিজ্ঞতা খুবই ভাল এবং আগামী দিনে ওখানে আরও কিছু কাজ রয়েছে। এপারেও কিছু নতুন ছবির কথাবার্তা চলছে কিন্তু সেই নিয়ে এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে এই মুহূর্তে সমদর্শীর সঙ্গে একটা ছবি করছি। আর তিন দিন মতো শ্যুটিং বাকি রয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় প্রামানিকের ছবি।

সামনেই তো তোমার অনুষ্ঠান ‘রবি ও রথী’। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে এমন একটি অনুষ্ঠানের কথা ভাবলে কেন?

রাতশ্রী: আসলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমাদের জেনারেশনের খুব বেশি ধারণা নেই। আমার মনে হয় উনি যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে না হতেন, তবে যে সমস্ত কাজ তিনি করে গেছেন, সেগুলো বোধহয় আরও একটু বেশি হাইলাইটেড হতো। কোথাও যেন মনে হয় যে বিখ্যাত বাবার সন্তান হওয়ার জন্য ওঁর কাজগুলো ঢাকা পড়ে গিয়েছে। উদ্ভিদবিদ্যা বলো, প্রাণীবিদ্যা বলো বা সৌরশক্তি— এমন কিছু কাজ তিনি সেই সময়ে বসে করেছিলেন, যেগুলো নিয়ে ইদানীংকালের প্রযুক্তিবিদরা বা বৈজ্ঞানিকরা কাজ করছেন। অথচ এই মানুষটি শেষ জীবনে অনেক কষ্ট পেয়ে মারা গিয়েছেন। এমনকী রবীন্দ্রনাথের যখন জন্মশতবার্ষিকী হয়েছিল, তখন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁকে আমন্ত্রণও জানাননি। অনেকেই হয়তো জানেন না যে বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন আশ্রমকে সাজানোর পিছনে ওঁর কত বড় ভূমিকা ছিল। শ্রীনিকেতনকে একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে তৈরি করেছিলেন কিন্তু রথীন্দ্রনাথই। তাই মনে হয়েছিল যে ওঁকে নিয়ে একটা কিছু করা উচিত যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ওঁর সম্পর্কে জানতে পারে। চৈতালীদি মানে চৈতালী দাশগুপ্তের এই বিষয়ে একটি দারুণ রিসার্চ ওয়ার্ক রয়েছে। সেই গবেষণাটি নিয়েই আমি, চৈতালীদি ও সুজয়দা ‘রবি ও রথী’-র পরিকল্পনাটা করি। এই অনুষ্ঠানে প্রবেশ অবাধ। প্রযোজক হিসেবে ইচ্ছে করেই কোনও প্রবেশমূল্য আমি রাখিনি। আমি চাই সবাই আসুক, অনুষ্ঠানটা দেখুক, প্রবেশমূল্য যেন কোনও বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। আমি কিন্তু খুব উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে নই। বাংলাদেশের ছবিটা করে যা আয় করেছি, তার থেকেই একটি অংশ ব্যয় করছি এই অনুষ্ঠানের জন্য কারণ আমার মনে হয়েছে এই ধরনের অনুষ্ঠান হওয়াটা খুব জরুরি।

এবার একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি, কোনও বিশেষ সম্পর্কে রয়েছ?

রাতশ্রী: নাহ্। ছিলাম কিন্তু এখন নেই। এখন আক্ষরিক অর্থেই সিঙ্গল।

অভিনয় ছাড়া তোমার আর হবি কী?

রাতশ্রী: আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি রান্না করতে আর নাচ করতে। আমার ডিপ্রেশন কাটে রান্না করে। আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞাসা করে কীসে তোমার স্ট্রেংথ আছে, আমি একটাই কথা বলব— ওয়ান অ্যান্ড ওনলি রান্না।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn