সুনামগঞ্জের সেঞ্চুরি পার করেছে পেঁয়াজের দাম
শহীদনূর আহমেদ :: দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও লাগামহীন হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের পেঁয়াজের বাজার। শহরের পাইকারি ও খুচরা বাজারে অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। উপজেলা কিংবা গ্রামের বাজারের অবস্থা আরো খারাপ। শনিবার সুনামগঞ্জ শহরের পাইকারি ও খুঁচরা বাজারে হঠাৎ করে ৯০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১১০-১২০ টাকা। সপ্তাহ দুয়েক আগে একইভাবে দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল পেঁয়াজের। বারবার পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, পেঁয়াজের বাজারে কারসাজি অব্যাহত আছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা মুনাফা লুটলেও সাধারণ ভোক্তার নাভিশ্বাস বাড়ছে। পেঁয়াজের অতিরিক্ত দামের কারণে ক্রেতারা বিড়ম্বনায় পড়েছেন। অসাধু ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেট আর বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম রাখছেন এমন অভিযোগ ভোক্তাদের। পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভোক্তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানালেও সুনামগঞ্জে বাজার মনিটরিংয়ে জড়িতদের বাজারে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি। যে কারণে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা শুধু পেঁয়াজই নয় বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম তাদের ইচ্ছেমতো হাঁকিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। দ্রæত সময়ের মধ্যে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজার মনিটরিংয়ের তৎপরতা বাঁড়াতে তাগাদা জানিয়েছেন তারা। এদিকে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৯০ টাকা রাখার কথা থাকলেও অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হওযায় সরেজমিনে বাজার ঘুরে সত্যতা যাচাই করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল খালেক।
শনিবার জেলা শহরের খুচরা ও পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা যায় পেঁয়াজের লাগামহীন দামের চিত্র। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকায় রহমান বেকারী এন্ড কনফেকশনারিতে ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১১০ টাকা। হৃদি ভ্যারাইটিজ স্টোরে মূল তালিকা অনুযায়ি কেজি প্রতি ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। স্টেশন রোডের মেসার্স গৌরাঙ্গতে মূল্য তালিকায় পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ১০০টাকা লেখা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। অতিরিক্ত দাম রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলেও মেসার্স গৌরাঙ্গের ম্যানেজার জানান ঢাকায় নাকি পেঁয়াজের দাম বেশি তাই তাদেরও উচ্চ মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। শহরের মধ্য বাজার এলাকার শাহীন স্টোরে মোটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় আর ছোট পেয়াজ ১১০ টাকায়। একই দামে লাভলু স্টোর, ইন্তাজ এন্ড ব্রাদার্সসহ বিভিন্ন খুচরা দোকানে একই দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। জেলরোড এলাকায় পেঁয়াজের পাইকারী বাজার মেসার্স মোল্লা ও মেসার্স অসীম রায়ে পাইকারী দরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। মূল্য বেশি হওয়ার ব্যাপারে পাইকারি ব্যবসায়িদের সাথে কথা বললে অসীম রায় নামে এক পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, সুনামগঞ্জে পেঁয়াজের কোনো স্টোর নেই। প্রতিদিন ঢাকা থেকে যে পেঁয়াজ আসে তাই প্রতিদিন বিক্রি হয়। ঢাকাই পেঁয়াজের দাম বেশি। ফলে আমাদের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়াও জেলা বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নের বাজারে খোঁজ নিয়ে পেঁয়াজ বেশি দামে বিক্রি হবার তথ্য পাওয়াগেছে। কিছু স্থানে ১৩০ টাকাও পেঁয়াজ বিক্রি করার খবর পাওয়াগেছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এভাবে পেঁয়াজের দাম অব্যাহত থাকলে ভোগান্তি বাড়তে থাকবে বলে শঙ্কা সাধারণ ক্রেতাদের।
পৌর শহরের বড়পাড়ার বাসিন্দা দোলাল মিয়া বলেন, গত সপ্তাহে পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকা দরে কিনেছি। হঠাৎ করে আবার পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। আমার মতো অনেকেই আজ বেশি দরে কিনেছেন। এভাবে পেঁয়াজের দাম বাঁড়তে থাকলে সাধারণ মানুষকে পেঁয়াজ খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে। শহরতলির হবতপুর এলাকার শাহজাহান মিয়া বলেন, ১১০ টাকা দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আমাদের মতো গরিব মানুষ এখন বিপদে আছে। তিনি বলেন, টিভিতে দেখি পেঁয়াজের বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের সুনামগঞ্জেও এরকম অভিযান পরিচালনা জরুরী। জেলা মার্কেটিং অফিসার মো. আব্দুল খালেক বলেন, পেঁয়াজের মূল্য কেজি প্রতি ৯০ টাকা রাখার কথা। আজ বাজারে যাইনি তবে আগামীকাল সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখবো। অতিরিক্ত মূলে পেঁয়াজ বিক্রি করা হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. ফয়েজ উল্লাহ বলেন, গত সপ্তাহে সুনামগঞ্জে বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছিল। তখন পেঁয়াজ কেজি প্রতি ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। শীঘ্রই আমরা সুনামগঞ্জের বাজারে আবার অভিযানে নামবো।