দোয়ারাবাজারে গৃহবন্দী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার
তাজুল ইসলাম :: জীবন বাজি রেখে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে যারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন তাদের অনেকেই আজ স্বাধীন দেশে পরাধীনতার অভিশাপে ভুগছেন। তেমনই একজন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ৭ নং লক্ষীপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন। সুদীর্ঘ ৭০ বছর ধরে বসবাসরত অবস্থায় তার নিজ বাড়ি থেকে বের হওয়ার একমাত্র রাস্তাটি সম্প্রতি বন্ধ করে দেওয়ায় ‘একঘরে’ হয়ে পড়েছেন তিনিসহ তার পরিবারবর্গ। এহেন অনৈতিক কর্মকান্ডে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনের প্রতিবেশী একই গ্রামের মৃত ইসমাইল ডালীর পুত্র মন্তাজ উদ্দিন ও আফিজ উদ্দিন গ্রামের প্রভাবশালী লোক। তারা ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের বাড়ির বাহির ও প্রবেশদ্বার সম্মুখস্থ রাস্তায় গাছ লাগিয়ে এবং বাঁশের বেঁড়া ও খুঁটি পেতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এর প্রতিবাদ করলে প্রতিপক্ষ মন্তাজ ও আফিজসহ তাদের ভাড়াটে লোকজন অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ উল্টো তাদের প্রতি মারমুখী হয়ে উঠে। এমনকি মিথ্যা মামলা দিয়ে অযথা হয়রানি করছে মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনসহ তার পরিবারের সদস্যদের। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলাকাবাসী বলেন, ‘দীর্ঘ ৫/৬ যুগ ধরে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে বাড়িতে বসবাস করছেন মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিনের পরিবারবর্গ। সম্প্রতি ওই রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। বিষয়টি নিস্পত্তির লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ একাধিকবার শালিস বসলেও উভয় পক্ষের অসহযোগিতার কারণে বিরাজমান বিরোধটি নিস্পত্তি হয়নি।’
মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নিয়ে গত মে মাসে আমিসহ এলাকাবাসী সুনামগঞ্জের ডিসি, এসপি, সিলেটের ডিআইজি, স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সংসদ সদস্য (সুনামগঞ্জ-৫) বরাবরে তাদের বিরুদ্ধে আবেদন করেও কোনো প্রতিকার মিলেনি। সম্প্রতি তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠায় আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়া তো দূরের কথা, বর্তমানে পরিবাবারবর্গ নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় মানবেতর জীবনযাপন করছি।’ দোয়ারাবাজার থানার ওসি আবুল হাশেম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন ও প্রতিপক্ষ মন্তাজ ও আফিজ সম্পর্কে উভয়পক্ষই আপন চাচাতো ভাই বটে। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরাজমান বিরোধটি নিয়ে আমি নিজেও একাধিকবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। কিন্তু উভয়পক্ষের মননশীল আচরণ না থাকায় বিষয়টি সমাধান হয়নি।’