ঢাকা: অবশেষে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের আমন্ত্রণে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তাঁর সঙ্গে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন মমতা। বুধবার (০৫ এপ্রিল) সরকারি সূত্রে গণমাধ্যমকে এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছে। আগামী শুক্রবার ৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেহেতু তিস্তার পানি নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে একটা সমস্যা চলে আসছে, তাই এবার শেখ হাসিনার ভারত সফরে এ বিষয়ে মমতার সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনার গুঞ্জন রয়েছে। তবে প্রতিবেশী ওই দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণ মমতার কাছে আগেভাগেই পৌঁছুলেও মমতার দিল্লি আসা নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ কিছুতেই কাটছিল না। অবশেষে হাসিনার সঙ্গে মমতার সাক্ষাতের ঘোষণার পর এ জল্পনার অবসান হলো।

এ সফরের সময় তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর অববাহিকা ব্যবস্থাপনা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পসহ নানা বিষয়ে পারস্পরিক মতবিনিময় হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কূটনৈতিকরা মনে করছেন, মমতা-হাসিনার মুখোমুখি বৈঠক হলে তিস্তা নিয়ে বরফ গলার কাজ শুরু হতে পারে। সরকারি সূত্রের খবর, হাসিনার সফরের সময় সীমান্তবর্তী পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছে কেন্দ্র। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের নৈশভোজে (যেখানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) একমাত্র মমতাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি সই না হোক, কিছুটা অগ্রগতির জন্য হলেও মমতার দিল্লিতে আসাটা কাম্য ছিল। শেষ পর্যন্ত তা নিশ্চিত হলো। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, মোদী-হাসিনার শীর্ষ বৈঠকে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের সংস্কার এবং উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশে যাতে জলের সমস্যা না হয়, সে জন্য ভারতকে বর্ষার জল ধরে রাখতে রিজার্ভার গড়ার প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এ ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসিনার রাজনৈতিক পরামর্শদাতা টি এইচ ইমাম।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আগামী শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মমতা। ওই দিন মমতার উপস্থিতিতে কলকাতা-খুলনা বাস চলাচল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী। একই দিন রাতে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে প্রণব মুখার্জির দেওয়া নৈশভোজে মমতা উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিংহের সরকার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একই সঙ্গে নিমন্ত্রণ করেছিল ঢাকা সফরের জন্য। সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে ঢাকা সফর বাতিল করে দিয়েছিলেন মমতা। তবে এবার মমতাকে তিস্তা নিয়ে যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, সেই বার্তা নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে হাসিনার ভারত সফরের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গেছে। মঙ্গলবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আব্দুল মুহিত নয়াদিল্লি পৌঁছেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক সমন্বয় সংক্রান্ত একটি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গেও সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক আর্থিক চুক্তিগুলি নিয়ে আলোচনা করবেন।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn