জামালগঞ্জে কৃষকদের বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান
জামালগঞ্জ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৭ হাজার হেক্টর জমি ফসলের মধ্যে হালির হাওরের ৫ হাজার হেক্টর জমি ফসল তলিয়ে গেছে। যার মূল্য সরকারি বাজার মূল্য ৮০ কোটি টাকা। গত ৩ এপ্রিল রাতে বাঁধ ভেঙে হালির হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। হালির হাওর পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ সহস্রাধিক কৃষকের হাহাকারে হালির হাওরের আকাশ ভারী হয়ে ওঠছে। সর্বশান্ত এই কৃষাণ-কৃষাণীরা গতকাল বুধবার উপজেলা পরিষদের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন- “হাওর বাঁচাও দেশ বাঁচাও” আন্দোলনের নেতা ইউসুফ আল আজাদ, উপজেলা আ’লীগ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, আব্দুল খালেক, ছবর আলী, আসন্ন ইউপি নির্বাচনের পদপ্রার্থী এম নবী হোসেন, মোবারক আলী তালুকদার, মো. শহিদুল ইসলাম, রজব আলী, আলী আক্কাছ মুরাদ প্রমুখ। বিক্ষুব্ধ কৃষকের বক্তব্য শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রসুন কুমার চক্রবর্তী বিক্ষোভকারীদের দাবির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি অসহায় কৃষকদের দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও একাত্মতা পোষণ করে বলেন- কৃষকদের এই দাবি অতিসত্তর জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দিয়ে সকল ঋণের সুদ মওকুফ, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোবাইল কোর্ট চালু করবেন। তারা দীর্ঘ ২ ঘণ্টা মিছিলের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে ১৫ দফা দাবি সম্মীলিত একটি লিখিত স্বারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপিতে তারা উল্লোখ করেন- জামালগঞ্জ উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা, দুর্নীতিবাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সহায়তায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও পিআইসিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, কৃষকদের কাছে সরকারি ও এনজিও সংস্থার নিকট হতে ঋণসহ সকল ঋণের সুদ মওকুফ করা, অসহায় কৃষকদের জীবন-জীবিকার তাগিদে সুদমুক্ত নতুন ঋণ প্রদান করা, চাল-আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সর্বদা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা।
ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখা, বর্ষা মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে হাওরের বেড়িবাঁধ ও বাঁধ নির্মাণে পরিকল্পনা প্ররয়ণ করা। হাওরের গুরুপ্তপূর্ণ স্থানে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো খনন করা, প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা। চলতি বছরে সরকারি খাজনা স্থগিত রাখা, আগামী বছরে হাওরের বাঁধ ও বেড়িবাঁধ ও নদী খনন প্রকল্প গ্রহণের জন্য স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধিদের পরার্মশকে প্রধান্ন দিতে উপজেলা পর্যায়ে গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা। প্রতি বছর হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময় সত্যতা ও জবাবদিহিতাসহ টেকসই বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহীনির তদারকি নিশ্চিত করা। প্রত্যেক বছর হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজে গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, বন্যাদুর্গত এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্যসেবায় সর্বদা পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ করা ও কৃষকের গবাদি পশুর খাবার ও চিকিৎসার সহায়তা করা। বিক্ষুব্ধ কৃষকদের মিছিল শেষে শতাধিক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপি পেশ করেন “হাওর বাঁচাও দেশ বাঁচাও” আন্দোলনের নেতা ইউসুফ আল আজাদ, কৃষক নেতা আব্দুস শহিদ, আব্দুল খালেক, ছবর আলী। তারা বলেন- কৃষকের এই ১৫ দফা দাবি পূরণে যেন অতিসত্তর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।