দোয়ারায় জেএসসিতে অংশ নিতে পারেনি রোকসানা, দায় কার?
তাজুল ইসলাম :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় চলতি বছরের জেএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না মেধাবি ছাত্রী রোকসানা আক্তার। গত বছরও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে একই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি রোকসানা। শিক্ষাক্ষেত্রে এ নিয়ে দুই বছর পিছিয়ে পড়ল সে। পরপর দু’দফা বিঘœ ঘটায় তার উচ্চশিক্ষা নিয়ে হতাশ ও অনিশ্চয়তায় ভুগছে রোকসানা ও তার পরিবারবর্গ। রোকশানা দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নস্থ সোনালী চেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সে পার্শ্ববর্তী ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কওছর আহমদের কন্যা।
জানা যায়, শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয় হতে পাঠানো পরীক্ষার্থীদের তালিকায় রোকসানা আক্তারের নাম সংযুক্ত না করায় এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের জন্য তার নামে কোনো প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়নি। শনিবার বিকালে এ নিয়ে পরীক্ষা বঞ্চিত রোকসানার ক্ষুব্ধ পরিবারসহ এলাকার সচেতন মহলের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত সর্বস্তরের জনতা এহেন ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে কর্তব্যে গাফিলতির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান । সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শাখাওয়াত হোসেন কবির, মামুন, ক্বারী গিয়াস উদ্দিন, মাওলানা সেলিম আহমদ, মজন্দর আলী, কলমদর আলী, মেহেদী হাসান, ওয়াহিদ আলী, মুক্তার আলী, আলীম উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, সদেক, জমির আলী, কিজির উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, মিরাদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, আব্দুর রব, হেলাল আহমদ, মোশাহিদ, আসিক মিয়া প্রমুখ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সোনালী চেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী রুহল আমীন বলেন, ‘পরীক্ষার ফি’সহ বিদ্যালয়ের যাবতীয় পাওনা আদায়পূর্বক আমি যথারীতি পরীক্ষার্থী রোকসানার নাম তালিকাভূক্ত করে প্রধান শিক্ষকের কাছে জমা দেই। কিন্তু কোন কারণে যে তার নামে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়নি তা প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামই ভালো জানবেন।’
অষ্টম শ্রেণির শ্রেণি শিক্ষিকা তাসলিমা বেগম বলেন, ’রোকসানা ক্লাসের নিয়মিত একজন মেধাবি ছাত্রী। জেএসসি পরীক্ষার্থী হিসেবে তার আবশ্যকীয় কার্যাদি সম্পাদনে আমি যথেষ্ট সহযোগিতা করেছি। কিন্তু কেন যে তার প্রবেশপত্র ইস্যু হয়নি সেটা নিয়ে আমরা মর্মাহত। আর প্রবেশপত্র না আসার মূল রহস্য প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারীই জানেন। নিয়ম-অনিয়মের মাশুল তাদের উপরই বর্তাবে।’জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোকসানার প্রবেশপত্র না আসায় সে পরীক্ষা দিতে পারেনি বলে আমি নিজেই মর্মাহত। পরীক্ষার্থীদের তালিকাসহ অফিসিয়াল যাবতীয় কাজের দায়িত্ব অফিস সহকারীর। তার অসাবধানতায় আজ এ ধরণের হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির শিকার মেধাবি রোকসানা। কিন্তু আমি নিজে সিলেট শিক্ষাবোর্ডে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে আপ্রাণ চেষ্টা তদবির করেও তার নামে প্রবেশপত্র ইস্যু করতে ব্যর্থ হয়েছি।’ জানতে চাইলে সোনালী চেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম বলেন, ‘এ অমানবিক ঘটনায় আমি খুবই মর্মাহত। শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। এসব উদাসীনতা নিরসনে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।’ এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মেহের উল্লাহ বলেন, ‘প্রবেশপত্র ইস্যু না হওয়াতে অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে মেধাবি শিক্ষার্থী রোকসানা আক্তার। তার শিক্ষা জীবনে নেমে এসছে চরম বিপর্যয়। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দায়িত্বহীনদের বিরুদ্ধে আইনানুগ বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’