বঙ্গভবন থেকে ওপরমহলে পাপিয়াদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হচ্ছে কি?
গত কয়েকদিন ধরে শামীমা নূর পাপিয়ার সাথে আওয়ামী নেতাদের ছবিগুলো ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নেতারা যারপর নাই বিব্রত হচ্ছেন। সেই সাথে অনেকগুলো প্রশ্ন উঠে এসেছে। যুব মহিলা লীগের জেলা পর্যায়ের একজন সাধারণ সম্পাদক মহামান্য রাষ্ট্রপতিসহ নাম করা ডাকসাইটে নেতা, ব্যবসায়ী, সচিব, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি, মন্ত্রীদের সাথে সেলফি বা ছবি তোলার সাহস এবং সুযোগ পায় কি করে? যাদের সাথে ছবি তুলেছে তারা জানেনও না কখন কিভাবে ছবি তোলা হচ্ছে, মেয়েটির আসল পরিচয় কিংবা ছবির পেছনের উদ্দেশ্য। অথচ তাদের ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে সেলফি কন্যা পাপিয়ারা নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার সাথে সাথে ভর্তি, বদলি, নানা তদবির, টেন্ডার, মদ, ইয়াবা, জাল নোট, অর্থ প্রাচার, যৌন বাণিজ্যসহ নানাবিধ অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এই সেলফি কন্যাদের নিয়ে খোদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ছবি তোলার সময় সতর্ক হোন’। কষ্ট ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আরও বলেছেন, ‘যাদের ওপর ভরসা করি তারাই হতাশ করে।’
দলে থাকা অনেক প্রান্তিক, সহযোগী বা অঙ্গ সংগঠনের নেতা এবং কর্মীদের অনুযোগ সুন্দরী নারীদের ভিড়ে তারা শ্রদ্ধেয় নেতাদের সাথে ছবি উঠানোর সুযোগ পান না। যদিও কখনো ছবি তোলেন সেই ছবি নেতাদের ফেসবুকে কখনো স্থান করে নিতে পারে না। নেতাদের ফেসবুকে কেবলই টেলিভিশন এবং রূপালী পর্দার নায়িকাদের ভিড়। এদের ভিড়ে চারিপাশ এতো চমকিত থাকে যে অনেক সময় আমাদের দল এবং দেশের নায়ক শ্রদ্ধেয় নেতাদের ভাবমূর্তি চাপা পড়ে যায়। কবি নজরুল লিখে গেছেন, ‘তাজমহলের পাঁথর দেখেছো/ দেখেছো কি তাঁর প্রাণ/ অন্তরে তাঁর মমতাজ নারী, বাহিরেতে শাজাহান।’ আসলে সবাই নেতার পাশে সবসময় নেতার জীবনের নায়িকা, তার প্রিয় মানুষ, তার স্ত্রী, পরিবারে সন্তান অথবা নাতি-নাতনীদের দুষ্টু-মিষ্টি মুখগুলো দেখতে চায়। এমপি জগলুল হায়দারের মা আর মাটির মানুষদের সাথে মাথায় মাটি বহন করা ছবি যেমন হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে ভাইরাল হয়েছিল, রূপবতী নায়িকাদের সাথে ছবিগুলো ঠিক ততোটাই দূরত্ব রচনা করে। আকাশের তারকাদের সাথে শ্রদ্ধেয় প্রিয় মানুষটিকেও তখন দূর আকাশের তারা বলে মনে হয়। নেতাদের সাথে দূরত্ব ঘোচাতে এই সব নায়িকাদের চকচকে-ঝকঝকে, চর্চিত রূপের প্রতিযোগিতায় দলের মেয়েরা তখন রোদে পোড়া চেহারাটায় প্রসাধনী মাখা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। সময় এসেছে রাজনীতির বাইরেও নারী নেত্রীদের সাজগোজ, বেশভূষা, আচার ব্যাবহার এবং তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতন করার। ২০০৬ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর লালসার শিকার, প্রকাশ্য দিবালোকে সম্ভ্রম হারা সেই যুব মহিলালীগ কর্মী আয়শা।
অনেক সম্ভাবনাময় আধুনিক একটি রাষ্ট্রে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে এটা সবার কাম্য। কিন্তু দলে পাপিয়াদের সংখ্যা বেশি হলে নেতৃত্ব নির্বাচনে ভুল হয়ে গেলে শিক্ষিত সচেতন নারীরা আসবে না বা এলেও টিকে থাকা দুষ্কর। সুসময়ে বসন্তের কোকিলের কোন অভাব হয় না, দল ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে ছাত্রদলের, বিএনপি-জামাত পরিবারের সুযোগ সন্ধানী বহু নারী যুব মহিলা লীগে এসে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেলফি তুলে বাণিজ্য করছে, নেতাদের নাম বিক্রি করে করে বিভিন্ন তদবির, বদলি, ভর্তি টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া সব কিছুতেই তাদের ভাগ চাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সদ্য আগত এমন অসংখ্য পাপিয়াদের ছবি আমলনামাসহ ভাইরাল হচ্ছে, তাদের জীবন বৃত্তান্ত সবার চোখে চোখে এখন ঘুরে ফিরছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, দেশ উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে, এই সময় দলের কার্যালয়ে, সচিবালয়ে, গণভবন এবং বঙ্গভবনে মক্ষীরাণীদের অবাধ প্রবেশাধিকার, বিচরণ, সেলফি থামাতে না পারলে, তাদের আগ্রাসনে কেবল পাঁচ তারকা হোটেল কিংবা গুটি কয়েক পরিবার নয় পুরো রাষ্ট্রটাই ধ্বংস হবে একদিন। স্বল্প শিক্ষিত সুন্দরী নারীর পরিবর্তে রাজনীতিতে সচেতন শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নারীদের অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া জরুরি বলে মনে করি। একজন শিক্ষিত পরিচ্ছন্ন নারী কেবল ভালো মা–ই নন উন্নত একটি রাষ্ট্র উপহার দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করি, মানবতার বাতিঘর শেখ হাসিনা তাঁর জ্বলন্ত উদাহারণ। লেখক: সম্পাদক, পূর্বপশ্চিম বিডি ডট নিউজ।