করোনা ছড়ানোয় খুনের অভিযোগ, মাথা নুইয়ে ক্ষমা চাইলেন ধর্মীয় নেতা
বার্তা ডেস্ক :: চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কমে এলেও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। সোমবার পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন চার হাজার ৩৩৫ জন এবং মারা গেছেন ২৬ জন। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ দেশটিতে দ্রুতগতিতে বিস্তারের জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীকে দায়ী করেছেন অনেকে। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে দেশটির দায়েগু শহরের খ্রিষ্ট ধর্মের শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের একটি গির্জায় গণপ্রার্থনায় অংশ নেয়া এক নারীর শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। পরে ওই নারীর মাধ্যমে গির্জায় আসা শত শত মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির সরকার ধর্মীয় এ সম্প্রদায়ের নেতা লি ম্যান-হির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সোমবার শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের এ নেতা জনসম্মুখে হাঁটু গেড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। খ্রিষ্ট ধর্মের শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের স্বঘোষিত মুক্তিদাতা লি ম্যান-হি আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনার পর স্বীকার করে বলেন, শিনচিওনজির গির্জায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বলছে, সোমবার গ্যাপিইয়ং শহরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দুই হাঁটু গেড়ে মাথা মাটিতে রেখে সরকারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের ৮৮ বছর বয়সী নেতা ম্যান-হি। দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের সংশ্লিষ্টতা ওই গির্জার সঙ্গে রয়েছে। প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে এ সম্প্রদায়ের নেতা ও স্বঘোষিত মুক্তিদাতা ম্যান-হির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করছেন সিউলের কর্মকর্তারা। অভিযোগ গঠনের বিষয়টি জানার পর কান্নাজড়িত কণ্ঠে ম্যান হি বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি আন্তরিক ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তিনি বলেন, অনেক মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। যদিও এটি ইচ্ছাকৃতভাবে হয়নি। ম্যান হি বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কোনোভাবেই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের লাগাম টানতে সক্ষম হইনি। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আমি সেজন্য অনেক কৃতজ্ঞ। আমি সরকারের কাছে ক্ষমাও চাই। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সম্প্রদায়ের সদস্যরা সরকারের ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টায় জোরালো সহযোগিতা করেছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। আমাদের মানবিক এবং অন্যান্য সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তার এ ক্ষমা প্রার্থনার সময় অনেকে শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভকারীদের অনেকে শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের সদস্যদের গালিগালাজ করেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ম্যান হি, বারবার চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি শিনচিওনজি সম্প্রদায়ের ৬১ বছর বয়সী এক নারীর শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় কর্তৃপক্ষ। ওইদিন তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। সংক্রমিত হওয়ার পরও দায়েগু শহরের শিনচিওনজির একটি গির্জায় অন্তত চারটি সমাবেশে অংশ নেন ওই নারী। দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত চার হাজার ৩৩৫ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছে এবং মারা গেছেন ২৬ জন। তাদের অধিকাংশই এ গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এ ঘটনার পর শিনচিওনজির গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। দেশটির অনেকেই এ গির্জার গোপনীয় বিভিন্ন কার্যক্রম, বিশেষ করে অল্প জায়গায় ব্যাপক জনসমাগমের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। সৌজন্যে : ডেইলি মেইল, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।