টিভিতে পাঠদানের প্রভাব পড়েনি হাওরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ওপর
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় পাঠে অমনোযোগী হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠে মনযোগী করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ সংসদ টিভিতে পাঠদানের কার্যক্রম চালু করে। কিন্তু এই কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়েনি সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের গ্রামগুলোতে। কারণ অধিকাংশ গ্রামে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানেনই না টিভিতে প্রচারিত পাঠদানের খবর। আর জানলেও পারিবারিক উদাসীনতায় আমলেই নিচ্ছেন না। সেই সাথে পাঠদান চলাকালীন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ও স্যাটেলাইট টিভির সংযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নেই সংসদ টিভিতে প্রচারিত পাঠদান কর্মসূচির প্রতি।
জানা যায়, করোনার প্রভাবে বাসাবন্দি রয়েছে সকল শিশু। শহরের প্রতিটি ঘরে আছে স্যাটেলাইট টিভি সংযোগ। তাদের অভিভাবকরাও সচেতন। কিন্তু গ্রামের চিত্র পুরোই উল্টো। হাওরপারের অনেক উপজেলার গ্রামগুলোতে এখনো চোখে পড়েনি করোনার প্রভাব। বয়স্ক থেকে শুরু করে ছোট শিশু-কিশোররাও ইচ্ছে মতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক সেদিক। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের কিছুটা পাঠে মনযোগী করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর বাংলাদেশ সংসদ টিভিতে ”আমার ঘর আমার ক্লাসরুম” শিরোনামে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৯ মার্চ থেকে শুরু করেছে ডিজিটাল পাঠদান কর্মসূচি। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ”ঘরে বসে শিখি” শিরোনামে ডিজিটাল পাঠদান ৭ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন রুটিন অনুযায়ী প্রচারিত হচ্ছে টিভিতে। হাওরপাড়ের সচেতন মহল জানান, বৈশাখে বাবা-মার সাথে বিদ্যালয়পড়ুয়া শিশু-কিশোররা ব্যস্ত ছিল ধান কাটা-মাড়াইয়ে। যেখানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হতে অনিচ্ছুক সেখানে টিভি দেখে লেখাপড়া শেখার চিন্তা-চেতনাতেই নেই।
হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার ভবানিপুর, জানজাইল, রামেশ্বরপুর, দুমাল, হাজদাপুর, দুগনোল, গোলাবাড়ি, ইসলামপুর, দুধের আওটা, লামাগাওসহ বিভিন্ন গ্রামে শিক্ষার্থীদের সাথে টিভিতে পাঠদান কর্মসূচির বিষয়ে জানাতে চাইলে তারা জানান তারা টিভি দেখেন না। একই অবস্থা বিরাজমান উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সর্বত্রই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, যেখানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা পাঠদানের জন্য উপস্থিত হন না, সেখানে টিভিতে পাঠদান শিখবে সেটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য। উপজেলা দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রামের এক অভিভাবক শামিম মিয়া বলেন, তাদের গ্রামে এখন বিদ্যুতই নাই আর টিভি তো আরও সৌখিন বিষয়। আর গ্রামের সৌর বিদ্যুতে যে একটি বা দুটি টিভি চলে সেখানে শিক্ষার্থীরা টিভিতে লেখাপড়া শিখে না। টিভিতে কার্টুন কিংবা বাংলা ছবি দেখে তারা সময় পার করছে। উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের ছিলানি তাহিরপুর গ্রামের জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান, হাওরের অনেক প্রত্যন্ত গ্রামে স্যাটেলাইট টিভি সুবিধা দূরের কথা, বিদ্যুৎই নেই। হাওরপাড়ে গরীব পরিবার রয়েছে যারা ইচ্ছে করলেই টিভি কিনতে পারেন না। শিক্ষার্থীরা পারিবারিক কাজ আর খেলাধুলা করেই সময় পার করে।
উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, হাওরপাড়ের গ্রামে টিভি নেই। উপজেলা সদরসহ আশপাশে কিছু স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা টিভিতে পাঠদান কর্মসূচির সুফল কিছুটা পেয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, করোনার প্রভাবে দীর্ঘ ছুটিতে থাকা শিক্ষার্থীদের টিভিতে প্রচারিত পাঠদান কর্মসূচি একটি ভালো উদ্যোগ হলেও হাওরপাড়ের গ্রামগুলোতে বিদ্যুৎ নেই। সেই সাথে স্যাটেলাইট টিভি না থাকায় শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, করোনা ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় হাওরে বোরো ধান কাটা-মাড়াই নিয়ে কৃষকসহ সবাই ব্যস্ত থাকায় টিভিতে পাঠদানের বিষয়টি তেমন প্রচার পায়নি। শিক্ষার্থীরা ছুটিতে থাকাকালীন সময় টিভি দেখে দেখে পাঠদান শিখতে পারে তার জন্য দ্রুত বিষয়টি প্রচার করার ব্যবস্থা করছি।