বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধযোদ্ধা ও এখনকার বাস্তবতা
আমাদের দেশের নিয়মই হলো একটা এসে আরেকটাকে চাপা দেয়। এখন মেজর সিনহাকে নিয়ে তোলপাড়। কদিন আগে সাহেদ-সাবরিনাকে নিয়ে ছিল মাতামাতি। তার আগে পাপিয়া, আরও অনেক ঘটনা। স্বাভাবিক কারণেই সেসব নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। মেজর সিনহাকে নিয়ে যে আলোচনা ও তোলপাড় চলছে তার একটা যথার্থতা আছে। একটা মানুষ এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তা কেউ মেনে নিতে পারছে না, সভ্য সমাজে মেনে নেওয়া যায়ও না। এখন প্রশ্ন- এ হত্যা কেন? এর কী বিচার হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ হত্যার বিচার না হয়ে উপায় নেই। কিছু কিছু ঘটনা এমন হয় যা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকে না। এ ঘটনাও ঠিক তাই। সে যত ক্ষমতাধরই হোক সিনহা হত্যা হজম করতে পারবে না। তাই সিনহা হত্যার বিচার নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে বিচার চান সেখানে না হয়ে যাবে কোথায়। এখন কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটাই দেখার বিষয়। একটু সময় লাগবে। সিনহা হত্যার বিচারের জন্য কারও সাক্ষীর প্রয়োজন নেই, তা শিপ্রাই হোক আর সিফাতই হোক বা অন্য চাক্ষুষ সাক্ষী। আমি একজন আইনবিদের ছেলে। আমার বাবা প্রায় ৬০ বছর আইন-আদালত নিয়ে ছিলেন। যেদিন মারা গেছেন সেদিনও কোর্টে গিয়েছিলেন মক্কেলের পক্ষে লড়াই করতে। তাই সেই ছেলেবেলা থেকে হত্যা মামলা নিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তাতে মেজর সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষী দিয়ে প্রমাণ করতে হবে না। কার অস্ত্র নিয়ে কটা গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তা বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য মেজর সিনহা হত্যা। শুনছি শিপ্রা, সিফাত চঞ্চল উচ্ছৃঙ্খল, তারা খারাপ- এসব এ হত্যায় ধর্তব্যে আসবে না। বিচার হবে মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা। তার যদি লাশ না পাওয়া যেত তাহলে একটা প্রশ্ন থাকত। তার লাশ গুম হয়নি, তাই সিনহা নিহত হয়নি তা বলা যাবে না। সিনহা নিহত হয়েছে এটাই বাস্তব। তাই সিনহা হত্যার বিচার হবে। এদিক-সেদিক করার কোনো সুযোগ নেই। হত্যা মামলার মূল কথা নিহতের লাশ। নিহতের লাশ পাওয়া গেলে হত্যা মামলার ১২ আনা সমাধান হয়ে যায়। মানে মেজর সিনহা যে নিহত হয়েছে বা মারা গেছে এটা সত্য। মেজর সিনহা মারা গেল সেটা স্বাভাবিক মৃত্যু, না অন্য কোনো উপায়ে এখন সেটা বিবেচ্য বিষয়। তার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, এটা কানার ভাই অন্ধও বলতে পারবে। পুলিশ নিজেই বলেছে পোস্টমর্টেমে তার গায়ে ছয়টা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটা আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাই এটি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু। এ মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? এটা স্পষ্ট হতে বাকি নেই যে, সিনহাকে প্রথমে এসআই লিয়াকত গুলি করেছে। গাড়ি থেকে হাত উঁচু করে বেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করেছে। এখন শোনা যাচ্ছে, এসআই লিয়াকত নন্দলাল বা নন্দদুলালের রিভলবার দিয়ে গুলি করেছে। রিভলবার যারই হোক এসআই লিয়াকত গুলি করে সাবেক মেজর সিনহাকে হত্যা করেছে। পুলিশ তার আত্মরক্ষার্থে গুলি করে মেজর সিনহাকে মেরেছে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ এ কাজটি করতে পারে। সত্যিই তেমন পরিবেশ হলে লিয়াকত যে মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেছে এটা হত্যা না হয়ে পুলিশের কর্তব্য পালন হবে। তখন লিয়াকত আর অপরাধী হবে না। কিন্তু তা তো হয়নি। লিয়াকত মেজর সিনহাকে গুলি করতে কত সময় নিয়েছে তা কোনো বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হচ্ছে লিয়াকত সিনহাকে গুলি করেছে- সেজন্য তার শাস্তি হবে। এ হত্যায় যারা সহযোগী তাদেরও বিচার হবে। লিয়াকতের যদি ফাঁসি হয়, তাদের যাবজ্জীবন না হলেও ২০ বছর তো হবে। তাই এখানে কেউ ধোয়া তুলসী পাতা নয়। যেভাবেই সাজানো হোক, মেজর সিনহার কাছে অনুমতিপ্রাপ্ত রিভলবার থাকলেও তা সে গাড়ি থেকে বের করেনি বা সে মুহূর্তে স্পর্শ করেনি। তাই এত দিনে এটা প্রমাণিত সত্য যে, মেজর সিনহা হত্যায় পুলিশের আত্মরক্ষার কোনো প্রশ্ন এখানে আসে না। মেজর সিনহা হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল। তাকে নীলডাউন করে বসানো হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে গুলি করলে সে পড়ে যায়। পড়ে গিয়ে পানি চাইলে তার গলায় পা দিয়ে চেপে ধরা হয়। কারবালায় আমাদের প্রিয় ইমামকে পানি দেওয়া হয়নি ঠিক তেমনি। সিফাতকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে তাকে হত্যার আসামি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘আমার পয়সা দিয়ে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে আমার দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের বিরুদ্ধে- তার বুকের ওপর হচ্ছে গুলি। আমরা গুলি খাই দোষ আমাদের।’ এখানে তো প্রায় তেমনি। গুলি করেছে এসআই লিয়াকত, নিহত হয়েছে সাবেক মেজর সিনহা, আসামি করা হয়েছে সিফাতকে! পুলিশ সমাজের রক্ষক, আইনের রক্ষক। পুলিশ এমন বিবেকহীন কাজ করতে পারে? তাহলে দেশ চলবে কী করে। এ করোনায় পুলিশের নানা মানবিক কর্মকান্ডে হৃদয় জুড়িয়ে যায়। সেই পুলিশের ভাবমূর্তি এসআই লিয়াকতরা যেভাবে ধ্বংস করছে তা মনে হয় পুলিশ বাহিনীর কেউ মেনে নেবে না। দু-চারটা প্রদীপ, নন্দলাল বা দুলাল কিংবা লিয়াকতের জন্য সারা দেশের পুলিশ নিন্দিত হবে নাকি কুলাঙ্গারদের শাস্তি নিশ্চিত করে তারা পাপমুক্ত হবে তা দেখার এখন সময় এসেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এর একটা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার হবে এবং বিচারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
শুনেছি কক্সবাজারের সবকটি থানার পুলিশদের এমনি দুর্বার দুর্নীতি। কক্সবাজারের এসপি পর্যন্ত এর সঙ্গে জড়িত। এই সময় এদের সবার বিচার হওয়া উচিত। কেউ কেউ মনে করছেন শিপ্রা ও সিফাতের সাক্ষী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইনের চোখে সিফাতের সাক্ষী চলে। না হলেও বিচার ঠেকে থাকবে না। শিপ্রার সাক্ষীর তো কোনো প্রয়োজনই নেই। কারণ শিপ্রা ঘটনাস্থলে ছিল না। আগে পরে কী করেছে বা করছে সেগুলো অন্য ব্যাপার। মেজর সিনহা হত্যাই তার সাক্ষী-সাবুদের কাজ করবে। অন্য প্রসঙ্গে বলা যায়, খলনায়ক ইলিয়াস কোবরা কৌশলে তাকে দিনের বেলা আটকে রেখেছে এগুলো আনুষঙ্গিক ব্যাপার। খুনের পরিকল্পনার জন্য এগুলোর প্রয়োজন হবে এবং বিচার হবে। কিন্তু খুনি হিসেবে লিয়াকত, প্রদীপ, নন্দদুলাল আরও যারা যারা জড়িত তাদের বিচারের জন্য মেজর সিনহার লাশই যথেষ্ট। আর অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। এখন প্রশ্ন- লিয়াকতরা কি মেজর সিনহাকে তিন-চারটা গুলি করেছিল? প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তাকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে নাকি পিকআপে অক্সিজেন চাইলে ওসি প্রদীপ আরও দুটি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। কদিন আগে বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজামের একটি লেখায় পড়েছিলাম, পুলিশ ঘেরাও করে মুর্তজা ভুট্টোকে যখন হত্যা করেছিল তখন এই একই রকম করেছিল। গুলিবিদ্ধ মুর্তজা ভুট্টোকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গাড়ির মধ্যে গুলি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে কোনো মুমূর্ষুকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে গলা টিপে মারার খবর শুনিনি। যদি ধরেও নিই উত্তেজনার বশে এসআই লিয়াকত গুলি করেছিল। তারপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহতকে কেন গুলি করতে হবে? নিশ্চয় ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। এ কালা সরাতে না পারলে আমাদের জন্য ঘোর অন্ধকার। সমাজকে নিরাপদ করতে পুলিশকে প্রশ্নের হাত থেকে বাঁচাতে এ হত্যার বিচার হতে হবে। বিচারে কোনো পক্ষপাতিত্ব হলে চলবে না। যারা এখনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তারা সত্যিই আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। তারা এত অন্যায় করেছে যে, মানুষে নয়, স্বয়ং স্রষ্টা তাদের ধরেছে। আল্লাহর বিচারের হাত থেকে কী করে এ পাষ-রা মুক্তি পাবে। শুনেছি মেজর সিনহার গায়ে সামরিক পোশাক ছিল। বেসামরিক ব্যক্তির সামরিক পোশাক পরা যদি অন্যায় হয়ে থাকে তার বিচার হবে। সামরিক পোশাক দেখে তো লিয়াকতের সিনহাকে সমীহ করার কথা। তা না করে তার ক্রোধ বেড়ে গিয়েছিল। মেজর সিনহা অবসরপ্রাপ্ত। সে কি পুরোপুরি সামরিক পোশাকে ছিল? হ্যাঁ, সেনাবাহিনীর লোকেরা যে কাপড় পরে সে রকম ছাপমারা কাপড় পরে থাকতে পারেন। সেটা মোটেই সামরিক পোশাক নয়। তার কাঁধে মেজরের শাপলা নিশ্চয়ই ছিল না। থাকলে বলা যেত। তাহলে সামরিক পোশাক কোথায়? সামরিক পোশাকের মতো পোশাক ছিল। ওই পোশাকের কারণে তার তো সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু সুযোগ পাননি। সেনাবাহিনীর প্রধান, পুলিশের আইজি ছুটে গিয়েছিলেন। তারা কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর বিশাল রিসোর্টে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কে না জানে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু এ বিচ্ছিন্ন ঘটনা সেনাবাহিনীর সবার ওপর এক বিরাট মনস্তাত্ত্বিক চাপ ফেলেছে তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। পুলিশ বাহিনীরও শতকরা ৯৯ ভাগ এ ঘটনায় দারুণ ক্ষুব্ধ। তারা তাদের সুনাম নষ্ট করতে চায় না। তাই কোনো ধানাইপানাই না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিনহা হত্যার বিচার হওয়া উচিত এবং এ হত্যার পেছনে যে পরিকল্পনা আছে যে উদ্দেশ্য আছে তা খুঁজে বের করা উচিত। প্রদীপের মতো দশ-বিশটা ওসি, লিয়াকত, নন্দদুলালের মতো বিশ-পঞ্চাশটা এসআইর ফাঁসি হলে কয়েক লাখ পুলিশের কিছু যায় আসে না। কিন্তু তারা একটি প্রতিষ্ঠানের যে সুনাম নষ্ট করেছে সেজন্য তাদের শাস্তি পেতেই হবে। সেখান থেকে পালানোর কোনো পথ নেই।
মেজর সিনহা ও সিফাত ডাকাতি করতে গিয়েছিল কিনা, এলাকায় কেউ ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেছে কিনা এসবের কোনো মূল্য নেই। শুটিং করার জন্য সিনহার লোকজনের যে কটা জিনিসপত্র ছিল সে কটা পুলিশ প্রথমে জব্দ তালিকায় দেখাল না কেন? এর কোনো জবাব নেই। এ কারণে অবশ্যই দায়িত্বশীল ব্যক্তির বা ব্যক্তিদের বিচারের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। অনেকেই মনে করে পুলিশের চাকরি খুব ক্ষমতার, যা খুশি তাই করতে পারে। যদিও করার চেষ্টা করেছে তাই। গুলি চালিয়েছে লিয়াকত, আসামি করা হয়েছে সিফাতকে! এর চেয়ে বড় অন্যায় আর কী হতে পারে? তাই এ বিচারের মধ্য দিয়ে আমাদের একটা সামাজিক সুস্থিতি প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। আশা করি, মেজর সিনহা হত্যার দ্রুত বিচারের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই সামাজিক সুস্থিতি ফিরে আসবে। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। তারা পৃথিবীর যে দেশেই গেছে দারুণ সুনাম কুড়িয়েছে। সেই তাদের বুকের মধ্যে যে দহন, সে দহন হত্যার প্রকৃত বিচার না হওয়া পর্যন্ত কমবে না। তাই সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত এ হত্যার বিচার যেন কেউ কোনো দিকে ঘুরিয়ে দিতে না পারে।
লিখেছিলাম, ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধকারী যোদ্ধারা কি দুষ্কৃতিকারী? মোশতাক ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদী প্রতিরোধযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী ঘোষণা করে যেখানে যাকে পেয়েছে গ্রেফতার করেছে। যোদ্ধাদের না পেলে তার আত্মীয়স্বজন, বাবা-মাকে অত্যাচার করেছে, সীমান্তে বাড়িঘর, জমি-জমা বাজেয়াপ্ত করেছে। মেজর জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ক্ষমতায় এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইর সঙ্গে চুক্তি করে প্রায় ৬ হাজার প্রতিরোধযোদ্ধাকে নানা জেলে নানা ক্যাম্পে আটক করে রেখেছিল। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে বিশ্বজিৎ নন্দীর ফাঁসি কার্যকর করতে চেয়েছিলেন। সারা পৃথিবীতে এ নিয়ে ঝড় উঠলে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিলে তার ফাঁসি কার্যকর করা থেকে এরশাদ বিরত হয়। এরপর এসেছিলেন খালেদা জিয়া। এরা সবই বঙ্গবন্ধুবিরোধী। তাই তাদের শাসনামলে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধযোদ্ধারা দুষ্কৃতকারী- এটা বলার বা শোনার একটা অর্থ থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করা অন্যায়- এটা মেনে নেওয়া যায় না। হঠাৎই সেদিন ফেসবুকে এক অল্প বয়সীর একটি মন্তব্য পড়লাম। আমার প্রতি তার অভিযোগ, আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলাম কেন? আমার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ইয়াহিয়া খানের ছিল, পাকিস্তানি প্রশাসনের ছিল। আমরা যদি জয়ী হতে না পারতাম, যদি বাংলাদেশ না হতো তাহলে কি সম্মানের জীবন কাটাতে পারতাম? আমরা পাকিস্তানিদের পরাজিত করে বাংলাদেশ বানিয়েছি তাই বীরউত্তম। পাকিস্তান থাকলে তো আমরা অধম। সেজন্য বলেছি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলেও কি আমরা প্রতিরোধযোদ্ধারা দুষ্কৃতকারী?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই প্রতিরোধযোদ্ধাদের জন্য এটা-ওটা করার চেষ্টা করেছেন। যেমন হাশমী মাসুদ জামিল যুগল ও আরও কয়েকজনকে হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়ার কাছে ’৭৫-এর প্রতিরোধযোদ্ধাদের কয়েকজনকে গরুর খামার করতে বেশকিছু সরকারি টাকা দিয়েছিলেন। প্রতিরোধযোদ্ধাদের রান্নাবান্না করত এমন একজন একসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি ছিলেন। তার হাত দিয়ে নেত্রকোনা, দুর্গাপুর, হালুয়াঘাটের কয়েক শ যোদ্ধাকে ১ লাখ করে টাকা দেওয়ার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিছু লোক টাকা পেয়েছে। ১ লাখ করে নয়, লাখের অর্ধেক যাদের হাত দিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা রেখে দিয়েছে। এই তো বছর দুই-আড়াই আগে নালিতাবাড়ীতে দেখেছিলাম ’৭৫-এর প্রতিরোধযোদ্ধাদের তালিকা হচ্ছে। তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। ভুয়া তালিকা তৈরি করে চার-পাঁচ শ লোকের নামে টাকা নিয়ে তাদের ৬০-৭০ হাজার করে হাতে দিয়ে লাখ টাকা লিখে নিয়েছে। এগুলো তো কোনো স্বীকৃতি নয়, এগুলো ভিক্ষে। প্রতিরোধযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করে ন্যায়, না অন্যায় করেছে তা জানতে চায়। যারা খুন করেছে তাদের বিচার হলে যারা খুনিদের বিরুদ্ধে লড়েছে তারা প্রশংসা পাবে না কেন? তারা সম্মান পাবে না কেন? সবার নামে পুলিশের খাতায় ’৭৫-এর দুষ্কৃতকারী হিসেবে এখনো লেখা আছে প্রশ্নটা সেখানেই। প্রতিরোধযোদ্ধারা দুষ্কৃতকারী না জাতীয় বীর?- এ প্রশ্নের উত্তর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতি সবিনয়ে জানতে চায়।লেখক : রাজনীতিক। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।