আ’লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পেতে ৯০দিন অপেক্ষা করতে হবে
বার্তা ডেস্ক: সম্মেলনের পর জমা দেয়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পেতে অপেক্ষা করতে হতে পারে প্রায় তিন মাস। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা হওয়া প্রস্তাবিত নেতাদের নাম যাচাই-বাছাই করা হবে। সংযোজন-বিয়োজন করেই চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। কমিটি গঠন নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঐকমত্যে না পৌঁছালে তাদের সরিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সূত্র জানান, সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালনার জন্য করোনাকালের পূর্বে বিভাগওয়ারি আটটি কমিটি করেছিল আওয়ামী লীগ। সেই কমিটিগুলোয় নাম থাকা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সাহারা খাতুন ও কার্যনির্বাহী নির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান মারা গেছেন। তাই নতুন কমিটিতে কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে একজন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর অন্য এক সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য নিয়ে মোট পাঁচ সদস্যের কমিটি এগুলো যাচাই-বাছাই করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়ার পর অনুমোদন পাবে কমিটিগুলো।
দলীয় সূত্রগুলো আরো জানায়, পাঁচ সদস্যের এ কমিটি সারা দেশ সফর করবে। প্রয়োজনে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ঢাকায় নিয়ে আসবে। বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। করোনাভাইরাসের কারণে যেসব ইউনিটের সম্মেলন হয়নি দীর্ঘদিন ধরে, সেগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, সাংগঠনিক জেলার জমা পড়া কমিটিগুলো অনুমোদন পেতে ডিসেম্বর পর্যন্ত লাগবে। কারণ যেসব কমিটি জমা পড়েছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করার নির্দেশ দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। এজন্য আট বিভাগে আটটি কমিটি করা হবে। পাঁচ সদস্যের এই কমিটি এ নিয়ে কাজ করবে। কমিটির দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমোদন পায়নি। অনুমোদন পাওয়ার পর যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু হবে। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, যেসব সাংগঠনিক জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পুরনো নেতারা থাকবেন এবং তাদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই, সেই নামগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কিছুই নেই। কিন্তু কোনো জেলা যদি নতুন মুখের বিষয়ে প্রস্তাব করে, যাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমাদের ওইভাবে জানাশোনা নেই তাদের বিষয়ে জানতে হবে। তবে সেখানে খুব বেশি সময় লাগার কথা না।
ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, বিগত সম্মেলনের আগে ঢাকা বিভাগের কোনো জেলা সম্মেলন হয়নি। এখানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছেই জমা হয়েছে। তিনি এটা নিজেই যাচাই-বাছাই করবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, জেলা কমিটি নিয়ে নেত্রী খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। তিনি দেখে দেখে বাছাই করেন। তাতে একটু সময় লাগতেই পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, জেলা কমিটিতে থাকতে হলে প্রথম শর্ত হলো কমপক্ষে পাঁচ বছর দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। এমপি-মন্ত্রী ও জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের উত্তরাধিকার হলেই তাকে বড় পদ দেয়া হচ্ছে কিনা তা দেখা হবে। অবশ্য তারা যদি ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে অতীতে সক্রিয় থাকেন সেটা বিবেচনা করা হবে। এছাড়া প্রভাবশালী নেতৃত্বের রোষানলে পড়ে আওয়ামী লীগের কোনো যোগ্য নেতা পদহারা হচ্ছেন কিনা যাচাই-বাছাইয়ে এগুলোও দেখা হবে কঠোরভাবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশ, দুটি কমিটি যেখানে আছে, সবগুলো বাতিল করে দিতে হবে। সেখানে নতুন কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। তৃণমূলের কোনো স্তরেই রাজনীতিতে গ্রুপিং-বিভক্তি এসব দেখতে চাই না। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জেলা-উপজেলায় বিভক্তির রাজনীতি আর হবে না। তৃণমূলে যেসব জেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিভক্তি রয়েছে তাদের দুজনকেই বাদ দেব। ২১তম জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে ৩১টি জেলায় সম্মেলন করে আওয়ামী লীগ। এসব জেলার এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। এসব সাংগঠনিক জেলাগুলোকে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা দিতে বলা হয়েছিল। সবাইকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কমিটি জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। বিভক্ত কোনো কমিটি কেন্দ্রে জমা নেয়া হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়। এ নির্দেশের কারণে অনেক সাংগঠনিক জেলা বিপদে পড়েছে। এ কারণে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলেও অনেক জেলায় বিভক্ত নেতৃত্ব থাকার কারণে কমিটি জমা দিতে সময়ক্ষেপণ করছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, সম্মেলন হওয়া প্রায় সব সাংগঠনিক জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া জমা হয়ে গেছে। দু-একটা হয়তো বাকি আছে, সেগুলোও প্রক্রিয়াধীন, দ্রুতই জমা পড়বে আশা করি।-বণিক বার্তা