বার্তা ডেস্ক ::  পেনশনের টাকার জন্য বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ডেকে মা-বাবাকে মারধর করে ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে মেয়ে। সাথে থাকা জামাতাও তার শ্বশুর-শাশুড়িকে মেরে আহত করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডিবি পুলিশের দু’জন কর্মকর্তা ও কয়েকজন সদস্য উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।  আহত বাবা-মাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবাহান ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম। আবদুস সোবাহানের ছেলে জসীম উদ্দীন জানান, তার বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে চাকরির মেয়াদ শেষে তিনি অবসরে যান। ২০১৭ সালে পেনশনের টাকা উত্তোলন করে ডাকবিভাগে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখেন।

পেনশনের টাকা পাওয়ার পর থেকেই তার বোন সীমা আক্তার এক লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাবাকে হয়রানি করতে শুরু করেন। বাবার কাছে টাকা পাবেন মর্মে গত অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে বাবা সোবাহান, মা জাহানারা বেগম ও ভাই জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ডিবি পুলিশ গিয়ে সোবাহানকে তার শ্বশুড়বাড়ি থেকে ধরে ডিবি কার্যালয়ে নেয়। স্থানীয় আইনজীবী শফিকুল ইসলাম মজিদ গিয়ে সীমাকে চার শতাংশ জমির মূল্যবাবদ ৬০ হাজার টাকা দেয়ার শর্তে ডিবি কার্যালয় থেকে আবদুস সোবাহানকে ছাড়িয়ে আনেন। ১৭ নভেম্বরের মধ্যে টাকা সীমাকে পরিশোধের কথা ছিল। কিন্ত সীমা ৬০ হাজার টাকার পরিবর্তে এক লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন। নির্ধারিত তারিখে ৬০ হাজার টাকা দিতে চাইলেও সীমা এক লাখ টাকাই দাবি করেন। এ নিয়ে বাবা ও মেয়ের মধ্যে ফের বিরোধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে ডিবির এএসআই মিজানুর রহমান ফের আবদুস সোবাহানকে ধরতে তার বাড়িতে যান। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার সন্ধ্যায় আইনজীবী আবদুল মজিদের চেম্বারে দেখা করতে যান সোবাহান। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত সাড়ে নয়টার দিকে ডিবির এএসআই মিজান বরগুনা স্টেডিয়াম এলাকা থেকে সোবাহানকে আটক করেন। সোবাহান বলেন, ‘‘ডিবির ওই অফিসার ‘জামাকাপড় খোল শালা, তোরে অফিসে ডেকেছি যাওনি কেন। তোরে টানায়ে পিটানো হবে, চল অফিসে’ আমার সঙ্গে এমন ভাষা ব্যবহার করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ফের আইনজীবী মজিদ গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকের সময় ঠিক করে আমাকে ছাড়িয়ে আনেন।’’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে উভয় পক্ষ সমঝোতার জন্য বসেন। এসময় ডিবির এসআই আশরাফ, শুশীল ও এএসআই মিজানসহ ডিবির চার-পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্ত সীমা একলাখ টাকার দাবিতে অনড় থাকায় সমঝোতা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ডিবি কার্যালয়ের ভেতরেই বাবা সোবাহান ও মা জাহানারা বেগমকে মারধর শুরু করেন সীমা ও তার স্বামী হাফিজুর রহমান। এসময় জাহানারা বেগমের কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকার ব্যাগ কেড়ে নেন তারা। খবর পেয়ে সোবাহানের ছেলে মো. সাহাবুদ্দিন ও জসীম উদ্দীন ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে মা-বাবাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এসময় সীমা ও তার স্বামীসহ অন্যরা ডিবি কার্যালয়ের ভেতর অবস্থান করছিলেন। এসময় আইনজীবী আবদুল মজিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী আবদুল মজিদ বলেন, মারধরের ঘটনাটি ডিবি কার্যালয়ের ভেতরে ঘটেছে। তিনি সীমা ও তার স্বামীর হাত থেকে সোবাহান ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ, ডিবি পুলিশের সদস্যরা তখন ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

সোবাহানের বড় ছেলে সাহাবুদ্দিন জানান, ‘ডিবির এএসআই মিজান আমার বাবার কাছে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। তিনি গত দুই দিনে অন্তত একশ’বার টাকা নিয়ে দেখা করতে বলেন। আমরা টাকা না দেয়ার কারণে এএসআই মিজান আমাদের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে বাবাকে হেনস্তা করেছেন।’ আবদুস সোবাহানের মুঠোফোনে ডিবির এএসআই মিজানের একাধিবার কল করার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সীমা আক্তারের মুঠোফোনে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ডিবির এএসআই মিজানুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘সীমার অভিযোগটি দেখার জন্য এসআই আশ্রাফ স্যারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমতলীতে থাকায় ওসি স্যার আবদুস সোবাহানকে ডেকে আনার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘বুধবার দুপুরে আমি তাদের বাড়িতে গিয়ে পাইনি। পরে ওনার স্বজনদেরকে অনুরোধ করে আসি; যাতে উনি বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে আমি স্টেডিয়াম এলাকা থেকে বৈঠকের তারিখ নিশ্চিত করার জন্য তাকে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম। হেনস্তা বা গালাগালের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে উপস্থিত করার জন্য একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেছিলাম।’

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ‘কার্যালয়ের ভেতরে নয়, বাইরে বাবা-মায়ের সঙ্গে মেয়ের সামান্য বচসা হয়েছে। এসএসআই মিজানের বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ‘মিজান মূলত বৈঠকের তারিখ নিশ্চিত করতে আবদুস সোবাহানকে ডেকে এনেছিল। হেনস্তার কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’ বরগুনা থানার ওসি তারিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn