বার্তা ডেক্সঃঃনির্বাচনের আগে ঢেলে সাজানো কেন্দ্রীয় বিচার বিভাগও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কোনো সহায়তায় আসছে না। তিনি নির্বাচনের ফল পাল্টে দেয়ার যে চ্যালেঞ্জ করেছেন, তাতে বিচার বিভাগ তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপই করছে না। উল্টো ট্রাম্পের নিয়োগ করা এক বিচারকই তাকে নিয়ে উপহাস করছেন। দেশের রাজনীতি বা ভোটের ফল নিয়ে কোনো আগ্রহই দেখাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। এখানে উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে মারা যান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রুথ ব্যাডার গিন্সবার্গ। বিরোধী দল ডেমোক্রেটদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি ওই পদে প্রচলিত রীতি না মেনে দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ করেন বিচারপতি এমি কোনি ব্যারেটকে। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টে রিপাবলিকান বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা শক্তিশালী হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আপ্রিল কোর্টে নিয়োগ দিয়েছিলেন বিচারক স্টিফানোস বিবাস’কে।
সেই স্টিফানোস বিবাস ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। পেনসিলভ্যানিয়া রাজ্যে জয় পেয়েছেন ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু অপ্রমাণিত ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের টিম ওই রায়কে উল্টে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু রিপাবলিকান বিচারক স্টিফানোস বিবাস ট্রাম্প টিমের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন এ মামলায়। ইউএস থার্ড সার্কিট কোর্ট অব আপিলস প্যানেলের পক্ষে সর্বসম্মত এক রায়ে তিনি লিখেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলো আমাদের গণতন্ত্রের জীবনীশক্তি। অভিযোগ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকতে হয়। তারপর আসে সেটা প্রমাণের বিষয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা কোনোটাই পাইনি। উল্লেখ্য, তিন বিচারকের এই প্যানেলে ছিলেন সাবেক রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নিয়োগ দেয়া দু’জন বিচারকও। তারাও স্টিফানোস বিবাসের ওই রায়ে স্বাক্ষর করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে। তারপর থেকে তিনি ফেডারেল আপিল কোর্টে নিয়োগ দিয়েছেন ৫৩ জন বিচারক। তার মধ্যে স্টিফানোস বিবাস একজন। পক্ষান্তরে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার দুই মেয়াদের ৮ বছরের ক্ষমতার সময়ে নিয়োগ দিয়েছিলেন ৫৫ জন বিচারক। ট্রায়াল-লেভেল ফেডারেল বিচারকদের প্রায় এক চতুর্থাংশই নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। লস অ্যানজেলেসের লোয়োলা ল স্কুলের প্রফেসর জেসিকা লেভিনসন বলেন, বিচারক নিয়োগের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন এতটাই কার্যকর ছিল যে, আসলে তা ছিল তার প্রকৃত একটি ভুল সিদ্ধান্ত। কারণ, তারা মনে করেছিল যাকে তারা নিয়োগ দেবেন, তারাই নির্বাচনের ফল তাদের পক্ষে এনে দেবেন।
উল্লেখ্য, ৩রা নভেম্বর নির্বাচন শেষে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হন। তার এই বিজয়কে উল্টে দিতে রাজ্য ও ফেডারেল কোর্টগুলোতে কমপক্ষে ৪০টি মামলা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাচনী শিবির, তার মিত্ররা। এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও অধিকারকর্মীরা। এর মধ্যে ১৩টি ফেডারেল মামলা এতটাই কম সফলতা দেখিয়েছে যে, তা উল্লেখ করার মতো নয়। তবে বেশির ভাগ অভিযোগই প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। স্টিফানোস বিবাসের কাছে আপিলে শুনানি হয়েছে এমন একটি কেসসহ তিনটি কেস খারিজ হয়ে গেছে। লেভিনসন বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তার আন্দাজনির্ভর অভিযোগ, যুক্তি, যার প্রতি বিচারকরা সমবেদনা দেখাতে পারছেন না। বিচারকদের কাছে এসব মামলা হলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রদর্শনের জন্য একটি সহজ উপায়। এসব মামলা একেবারে ফালতু।
একটি ঘটনায় ট্রাম্পের নিয়োগ দেয়া একজন বিচারক ট্রাম্পেরই আইনজীবী লিন উডের মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। ওই মামলায় জর্জিয়ায় জো বাইডেনকে বিজয়ী এমন সার্টিফাই স্থগিত করার আবেদন করা হয়েছিল। ১৯ শে নভেম্বর আটলান্টায় ইউএস ডিস্ট্রিক্ট জজ স্টিভেন ত্রিমবার্গ তার রায়ে লিখেছেন, শেষ মুহূর্তে সার্টিফিকেশনকে স্থগিত করার মধ্য দিয়ে সংশয় সৃষ্টি হবে। এই সার্টিফিকেশন স্থগিত রাখার কোনো মৌলিক সত্য ও আইন আমি দেখছি না। তবে ট্রাম্পের আইনি পরিষদের উপদেষ্টা জেনা ইলিস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আদালতের কাছে পূর্ণাঙ্গ তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ দেয়া হয়নি ট্রাম্প টিমকে। যে দুর্নীতি হয়েছে, অনিয়ম হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার সঠিক বিচার হওয়া উচিত। সেটা হয়তো আদালতে না হয় রাজ্যের লেজিসলেচারে হওয়া উচিত।
ওদিকে নির্বাচনের আগে সেপ্টেম্বরে পেনসিলভ্যানিয়াতে ডাকযোগে আসা ভোট গণনার জন্য নির্বাচনের দিনের পর তিনদিন পর্যন্ত বর্ধিত করে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে পেনসিলভ্যানিয়ার রিপাবলিকানরা। এতে ট্রাম্প শিবিরের অনুরোধ স্থগিত রয়েছে বলে বলা হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে ৯ জন বিচারক আছেন। তার মধ্যে তিনজনকে নিয়োগ দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তারা হলেন বিচারপতি নিল গোরসাস, ব্রেট কাভানাহ এবং সম্প্রতি নিয়োগ দিয়েছেন এমি কোনি ব্যারেটকে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে সুপ্রিম কোর্টে যোগ দেন ব্যারেট। এর ফলে সুপ্রিম কোর্টে এখন রিপাবলিকানরা ৬-৩ ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বার বার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনের ফল নির্ধারণ হবে আদালতে। ফলে তিনি যখন নির্বাচনের ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন, ভিত্তিহীন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করছেন, তখন কি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা তার পক্ষ নেবেন!
তবে রোববার ট্রাম্পের কণ্ঠ অনেকটাই নরম শুনিয়েছে। তিনি ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বাইডেনের বিজয় আদালতে উল্টে দেয়ার পথ ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। তিনি বলেছেন, সমস্যাটা হলো, সুপ্রিম কোর্টকে বাগে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। আইনি বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণত ফেডারেল বিচারকরা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে অনিচ্ছুক।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৮ বার