বার্তা ডেক্সঃঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর সুনামগঞ্জে যার কন্ঠস্বর একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে তিনি হচ্ছেন পঙ্গু বাউল শিল্পী বাদল দাশ (৬০)। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের অক্ষয়নগর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। পিতা স্বর্গীয় ভজেন্দ্র কুমার দাশ,মাতা প্রমিলা দাশ। পিতামাতার ৩ সন্তানের মধ্যে তিনি পরিবারের জেষ্ট সন্তান। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে এখনও তিনি রয়ে গেছেন চিরকুমার হিসেবে। তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যয়নকালেই প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে চলেছেন তিনি। সুনামগঞ্জে ছাত্রলীগের উদ্যোগে ৬ দফা আন্দোলনের পক্ষে পরিচালিত সকল সাংগঠনিক কর্মকান্ডেই তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান যখন সুনামগঞ্জ স্টেডিয়াম মাঠে এসে জনসভা করেন এবং এই জনসভায় যখন বাউল কামাল পাশাসহ অন্যান্য শিল্পীরা পরিবেশন করেন,
ও পচা জারমুনি ৬ দফার বাতাসে তুমি ঠিকবায়নি এবং
মুজিব বাইয়া যাওরে তোমার ৬ দফারি নাও
নিপীড়িত দেশের মধ্যে জনগনের নাও মুজিব বাইয়া যাওরে ইত্যাদি
দেশাত্ববোধক গান তখন থেকেই নৌকা ও শেখ মুজিব নামের ২টি শব্দের সাথে তিনি গড়ে তুলেন তার চিন্তা সখ্যতা ও চেতনা। ও পচা জারমুনি ৬ দফার বাতাসে তুমি ঠিকবায়নি এবং মুজিব বাইয়া যাওরে তোমার ৬ দফারি নাও নিপীড়িত দেশের মধ্যে জনগনের নাও মুজিব বাইয়া যাওরে ইত্যাদি দেশাত্ববোধক গানের মূল রচয়িতা বাউল কামাল পাশা উল্লেখ করে তিনি বলেন,বাউল কামাল পাশা সুনামগঞ্জে প্রায়ই আসতেন। আমরা যারা ৬ দফা,নৌকা ও বঙ্গবন্ধুর গান গাইতাম তাদেরকে তিনি গান লিখে দিতেন।
পাকবাহিনী কর্তৃক সুনামগঞ্জ দখল হলে পরিবার ও গ্রামবাসীর সাথে তিনিও পঙ্গু অবস্থায় আশ্রয় নেন সীমান্ত সংলগ্ন বালাট শরনার্থী ক্যাম্পে। পঙ্গু থাকাবস্থায়ও বালাট সাবসেক্টরের মেডিকেল ক্যাম্পে যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে স্বাস্থ্য সেবা দেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়িতে ফিরে এসে তিনি সুনামগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে আবার গড়ে তুলেন তার ঠিকানা। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর পূর্ববর্তী সময়ে তৎকালীন আওয়ামীলীগ অফিসকে কেন্দ্র করেই চলতো তার দিনাতিপাত। অনেক সময় রাত্রিতে আওয়ামীলীগ কার্যালয়েই থাকতেন তিনি। এই সময় মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী। ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে আরো যারা দায়িত্ব পালন করেন তাদের মধ্যে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান,জসিম উদ্দিন দিলীপ,শামসুল ইসলাম এখলাছ সহ আরো অনেকে। ঐ সময় আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের উদ্যোগে যতগুলো রাজনৈতিক সভা সমাবেশ হত সেগুলোতে গান পরিবেশন করতেন এই পঙ্গু বাউল বাদল দাশ,ক্যানভেসার মাখনলাল দাস ও বাউল নুর মিয়া। ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশিষ্ট নাট্যকার গীতিকার দেওয়ান মহসিন রাজা চৌধুরীর সাথে সহশিল্পী হিসেবে ঢাকা ও সিলেট রেডিও কেন্দ্রের তালিকাভূক্ত শিল্পী হিসেবে দেশাত্ববোধক ও আঞ্চলিক গান গাইতেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাত্রিতে জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যার মধ্যে দিয়ে খুনী মোস্তাকসহ সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় আসলে বঙ্গবন্ধুপ্রিয় এই বাউল শিল্পীরা গান ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যান। বাউল বাদল দাশ লেগে যান পান সিগারেট বিক্রির ব্যবসায়। কিছুদিন আগেও ইব্রাহিমপুর আনন্দ বাজারে তার একটি পান সিগারেটের দোকান ছিল। এখন সেই দোকান আর ব্যবসাটা তার নেই। বর্তমানে ছোট ভাইদের সংসারেই তিনি অসুস্থ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। দুটি পা বিকলাঙ্গ থাকায় শারীরিক প্রতিবন্দ্বী হওয়ায় হাত দুটোকে পা হিসেবে ব্যবহার করে চলাফেরা করতে হয় থাকে। সরকারের কাছে তার দাবী,“পঙ্গু হওয়ার পরও আমি মুক্তিযোদ্ধাদের খেদমত করেছি। আহতদেরকে চিকিৎসা দিয়েছি। আমার চাইতে অনেক অনেক কম অবদান যাদের তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভূক্ত হয়ে সরকারী সহায়তা পাচ্ছে। আজকে আমার নামটি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় থাকলে আমি সবচেয়ে বেশী উপকৃত হতাম।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার দাবী আমাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা দিন। আমি আমার কষ্টের মধ্যেও বাকী জীবনটা শান্তিতে কাটাতে চাই। এদিকে প্রতিবন্দ্বী বাউল শিল্পী বাদল দাশের কষ্টের কথা শুনে তাঁর প্রতি সদয় হয়ে তার ঔষধ কেনার জন্য আর্থিক অনুদান প্রদান করেছেন নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের ২ বারের নির্বাচিত সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী।
১৬ই ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের অক্ষয়নগর গ্রামে গিয়ে প্রবাসী আওয়ামীলীগ নেতা নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহীর দেয়া আর্থিক অনুদানের টাকা হস্তান্তর করেছেন শহরের উকিলপাড়া নিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা অরুন চন্দ্র দে,আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক বাউল আল-হেলাল ও আল-হেলালের কনিষ্ট পুত্র মাহমুদ আল হাদী। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান চৌধুরী শাহী বলেন,দেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ৭০ এর নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণসংগীত পরিবেশনে বাদল দাশের সক্রিয় অবদান রয়েছে। সরকারের উচিত তার অবদানকে স্মরণ করে তাঁকে স্বীকৃতি প্রদান করা। তিনি এজন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আল-হেলাল
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৪৩৯ বার