নিউইয়র্কে বিপুল উৎসাহে বৈশাখ-বরণ
এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে : হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নতুন বছরের উদ্দীপনায় পরস্পরের সহযোগী হয়ে প্রবাস প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতি জাগ্রত রাখার সংকল্পে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশীরা বাংলা নতুন বছরকে স্বাগত জানালেন। ‘বাংলা নববর্ষ ১৪২৪’কে বরণের সবচেয়ে বড় উৎসবটি হলো নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বেলাজিনো পার্কিং লটসহ সুপরিসর মিলনায়তনে। এ উপলক্ষে শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি তথা পহেলা বৈশাখ জ্যাকসন হাইটসে বৈশাখী সাজে সজ্জিত হয়ে বাঙালি নারী-পুরুষ এবং শিশুদের ঢল নেমেছিল। আর উচ্ছ্বল জনতার এই সরব উপস্থিতির স্পষ্ট ঘটে ডাইভার্সিটি প্লাজা থেকে বৈশাখী র্যালির মধ্য দিয়ে। ‘এসো হে বৈশাখ-এসো এসো’ গানে র্যালি এগিয়ে যায় বেলাজিনো পার্কে। এক পর্যায়ে পার্কসহ পুরো মিলনায়ন বাঙালির প্রাণে প্রাণে ভরে উঠে। এরপরই মূলমঞ্চে বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী এই ‘বৈশাখী উৎসব’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন হোস্ট সংগঠন ‘বাংলাদেশ সোসাইটি’র বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এম আজিজ। বিপুল করতালির মধ্যে এম আজিজ বলেন, ‘উৎসবের এই আমেজকে সারাটি বছর হৃদয়ে লালন করতে হবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে আমেরিকান স্বপ্ন পূরণে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করতে হবে এ উৎসব থেকে।’ এ সময় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকীও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বৈশাখী উৎসবের জন্যে গঠিত সাব-কমিটির আহবায়ক আব্দুল খায়ের মিয়া, সদস্য-সচিব আজাদ বাকির, প্রধান সমন্বয়কারি সৈয়দ এম কে জামান, বাংলাদেশ সোসাইটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম ভ’ইয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মণিকা রায়, গণসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, সমাজকল্যাণ সম্পাদক নাদির এ আইয়ুব, সাহিত্য সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ, ক্রীড়া সম্পাদক নওশাদ হোসেন, স্কুল শিক্ষা সম্পাদক আহসান হাবীব, নির্বাহী সদস্য ফারহানা চৌধুরী, সাদী মিন্টুসহ সকলেই বৈশাখী পোষাকে মঞ্চে উঠলে মিলনায়তনে উপস্থিত সকলে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান। বৈশাখের এ আমেজ প্রবাস প্রজন্মে জাগ্রত রাখতে সারাটি বছর কাজের অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন এই কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীতের পর প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মধ্য দিয়ে উপস্থিত সকলে বৈশাখে হারিয়ে যান। নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহ মাহবুব, রোকশানা মির্জা, বাপ্পী সোম, রানু নেওয়াজ প্রমুখ। সুরছন্দের শিল্পীরাও সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে। অতিথি শিল্পী ছিলেন রিজিয়া পারভিন। তার গানে মাতোয়ারা পুরো মিলনায়তনই যেন নাচতে থাকে।
এ উপলক্ষে বাঙালি খাদ্য ও পণ্যের স্টলও ছিল উৎসব প্রাঙ্গনে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে বৈশাখী উৎসব বাঙময় হয়ে উঠে পান্তা-ইলিশ পরিবেশনের সময়।
ড্রামা সার্কেল নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে বৈশাখ বরণের বর্ণাঢ্য উৎসব হয় কুইন্স প্যালেসে। এ সংগঠনের প্রধান নার্গিস আহমেদের সার্বিক নির্দেশনায় অতিথির মধ্যে ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কন্সাল জেনারেল শামীম আহসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদ হাসান, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফোবানার যুগ্ম নির্বাহী সচিব জাকারিয়া চৌধুরী, বিনোদন বিচিত্রার সম্পাদক দেওয়ান হাবিব প্রমুখ। বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন ড. দেলওয়ার, আকবর হায়দার কিরণ, সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। গত দেড় দশকের মত এই সংগঠনের বৈশাখ বরণ অনুষ্ঠানে এবারও পান্তা ইলিশ পরিবেশিত হয়। সঙ্গীতে অংশ নেন প্রবাসের বিশিষ্ট শিল্পীরা। এ সময় প্রদত্ত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত প্রবাসের কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও বাঙালি সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে প্রবাসীদের নিরন্তর প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং বলেন যে, ‘নিকট ভবিষ্যতে এই নিউইয়র্কেও বড়ধরনের মঙ্গল শোভাযাত্রা হতে পারে।’ ‘গেল বছরের গ্লানি মুছে, সকল অশুভ শক্তি পর্যুদস্ত করে মঙ্গলের পথে সকলে এগিয়ে যাই-এই হউক নতুন বছরের প্রত্যাশা’-বলেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ। ফোবানার যুগ্ম নির্বাহী সচিব ও আওয়ামী লীগের মহানগর শাখার সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাস মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে কার্যক্রম বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলছে, তাকে এগিয়ে নেয়ার সংকল্প গ্রহণ করা আহবানেই সমাগত এবার বাংলা নতুন বছর। এই প্রবাস থেকেই দৃপ্ত প্রত্যয়ে সকলকে তা উচ্চারণ করতে হবে।’
বৈশাখ বরণের আরেকটি অনুষ্ঠান হয় নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে। সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘আব্দুল কাদের মিয়া ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট কাদের মিয়া উপস্থিত সকলকে বৈশাখী শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের সময় অনুরোধ জানান বাংলাদেশের স্বার্থে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার। ‘একাত্তরের চেতনায় আবারো ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলার পরিক্রমাকে ত্বরান্বিত করতে’-উল্লেখ করেন কাদের মিয়া। এখানেও বিভিন্ন ধরনের ভর্তা, পিঠা, পান্তা-ইলিশসহ বাঙালি-খাদ্য পরিবেশন করা হয় সকলের মধ্যে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন নজরুল ইসলাম বাবুল, মোবস্বির মিয়া, মোহাম্মদ হানিফ, লুৎফুল করিম, রেফায়েতউল্লাহ চৌধুরী, ফজলুল কাদের প্রমুখ।