২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আর কখনও বিশ্ব-পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে না।’ কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের তিন মাসের মধ্যেই দুই দেশে মার্কিন সামরিক হামলার ঘটনায় মনে হচ্ছে ট্রাম্প তার মনোভাব বদলে ফেলেছেন। আগের প্রেসিডেন্টদের মতো যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারায় তার পররাষ্ট্রনীতি চালিত করা ছাড়া তার সামনে উপায় নাই বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

বৈশ্বিক নাট্যমঞ্চ থেকে নিজেদের গুটিয়ে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ঘোষণা করেছিলেন তিনি। বলা যায়, এই প্রচারণা ও নীতিতেই তিনি নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। যদিও প্রশাসনিক অনেক নীতিতে ট্রাম্প তার ‘সংরক্ষণবাদ’ ধরে রেখেছেন, বিশেষ করে মার্কিন কূটনীতি খাতের বাজেট কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে। কিন্তু সিরিয়া ও আফগানিস্তানে বোমা হামলার পর বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক পরিসরে মার্কিন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করে যাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আটলান্টিক কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারি পাভেল বলেন, ‘ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজের কোনো ডকট্রিন আছে কিনা, তা এত আগে বলা কঠিন। তবে নিশ্চিতভাবেই আমরা তার সামরিক শক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার লক্ষ্য করছি।’
ক্ষমতা গ্রহণের পর ২৯ জানুয়ারি ইয়েমেনে আল কায়দা সংশ্লিষ্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর অনুমোদন দেন ট্রাম্প। ওই অভিযানে একজন নেভি সিল কর্মকর্তা নিহত ও তিনজন আহত হন এবং অন্তত ২০ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়। ইরাক-সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়তে কয়েকশ’ অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছেন তিনি। সোমালিয়ায় আল শাবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউএস-আফ্রিকা কমান্ডকে তিনি সমরশক্তি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছেন। ৪ এপ্রিল সিরিয়ায় দেশটির সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় শতাধিক বেসামরিকের মৃত্যুর পর তিনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্দেশ দেন। সিরীয় বিমানঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মার্কিন বাহিনী। আর বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানে আইএস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অপারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। তবে এই হামলায় ট্রাম্প নিজে নির্দেশ দিয়েছেন কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেছেন, আমি সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনমতো পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছি।
ইরাক যুদ্ধে অভিজ্ঞ মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ও বর্তমানে ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিটার মানসুর বলেন, প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনী কমান্ডারদের হামলা করার ক্ষমতা দিয়েছেন, আর তারা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এটা বিশ্বকে এই বার্তাই দেয় যে, আমেরিকা আবার যুদ্ধে ফিরেছে।’ পিটার আরও বলেন, আগেরবার সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলার পর ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা দিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ রেডলাইন অতিক্রম করেছেন। কিন্তু তিনি হামলার নির্দেশ দেননি। ২০১৩ সালের শেষ সময় পর্যন্ত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে যারাই যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে চেয়েছে, ওবামা প্রশাসন তার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক শক্তি ব্যবহার করেননি। তারা জনত আমাদের ক্ষমতা আছে, কিন্তু আমরা তা ব্যবহারে ইচ্ছুক নই।’
এখন ট্রাম্পের যখন-তখন সামরিক শক্তির ব্যবহার রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়াকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। পিয়ংইয়ংয়ের ষষ্ঠ পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার আশঙ্কা ঘিরে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিরিয়া-আফগানিস্তানে হামলা উত্তর কোরিয়ার জন্য বার্তা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না। উত্তর কোরিয়া একটা সমস্যা। আর তার জন্য কী করা যায় আমি দেখছি।’
আফগানিস্তানে ‘সব বোমার জননী’ বোমা ফেলতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, আমি যেটা করেছি, তা হচ্ছে আমার সেনাবাহিনীকে কর্তৃত্ব দিয়েছি। খোলামেলা বলতে গেলে, আমি তাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়েছি। সে-কারণে তারা সম্প্রতি এত সফলতা পেয়েছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, সেনাবাহিনীকে এই ‘পূর্ণ কর্তৃত্ব’ দেয়াটা বিপজ্জনক। বোঝা যাচ্ছে, এর মাধ্যমে ট্রাম্প কূটনৈতিক সমস্যাগুলোতে সামরিক সমাধানে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর মাধ্যমে দায়িত্বও এড়াতে চাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমার মনে হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেনাবাহিনীকে ব্যাপক কর্তৃত্ব দিয়েছেন। তাদের অনেক বেশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দিয়েছেন। আর সেজন্য তিনি বেশ সুখী এবং কৃতিত্ব দাবি করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যখন দুর্ভাগ্যক্রমে পরিস্থিতি বেসামাল হবে, তখন কি তিনি দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হবেন? সেনাবাহিনী তো প্রায়ই ভুল করে থাকে। আপনি কর্তৃত্ব বণ্টন করতে পারেন, দায়িত্ব নয়। অন্যকে বিশ্বাস করে ক্ষমতা দিলে, সিনিয়র কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব আপনার। আর কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn