বার্তা ডেস্ক :: ২৬ বিয়ে করা মামুনের খপ্পরে এবার এক নারী সাংবাদিক। মামুনের নাম কখনো শাহাদাৎ হোসেন, কখনো করিম। বিভিন্ন নামে তিনি পরিচিত। তবে এলাকার লোকজন তাকে করিম নামে জানেন। পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার বুড়িরচর তুসখালী এলাকার মৃত মোতালেব হাওলাদার চেয়ারম্যানের ছেলে তিনি। মামুন আগের ২৬টি বিয়ের তথ্য আড়াল করে গত বছরের ৪ জুন এক নারী সাংবাদিককে বিয়ে করেন। অভিযোগ রয়েছে, একের পর এক মেয়েদের জিম্মি করে তাদের দিয়ে নারী পাচার, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করাতে বাধ্য করতেন।
জানা যায়, তার রয়েছে অবৈধ অস্ত্রধারী নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। এসব কাজের জন্য সহযোগী হিসেবে রয়েছে একটি বড় ধরনের সিন্ডিকেট। দিনের পর দিন এই ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও বিশেষ কৌশলে নিজেকে রেখেছে আইনের আওতা থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার নামে রয়েছে ধর্ষণ, যৌতুক, নারী নির্যাতনসহ বেশ কয়েকটি মামলা। বিভিন্ন পন্থায় কোটি টাকার মালিক হয়েছে মামুন। তার ভয়ংকর থাবায় অনেক মেয়ের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে।
সম্প্রতি তার সব বিয়ের বিষয় গোপন রেখে, অর্থসম্পদের লালসা দেখিয়ে এবং স্বার্থলোভী বাবা-মাকে হাত করে বিয়ে করে এক নারী সাংবাদিককে। ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিক বলেন, ‘করোনাকালে পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে করলেও এক সপ্তাহ পর গ্রামের বাড়িতে থাকা অবস্থায়ই সে আমার কাছ থেকে বেশকিছু অর্থ হাতিয়ে নেয়। ঢাকায় ফেরার পরো বিভিন্ন সময়ে টাকা নেয় সে। সর্বশেষ এক লাখ টাকা নেওয়ার পর মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে, যা দেওয়া আমার সাধ্যের বাইরে ছিলো।
এর মধ্যে আমার বাসার আসবাবপত্র এবং স্বর্ণালংকার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে একটি ব্যাচেলর বাসায় ওঠে। সবদিক দিয়ে নিঃস্ব করে আমাকে দিয়ে অনৈতিক কাজকর্ম করাতে চায়। নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। পরে মামুনের ফোনালাপ ও সন্দেহজনক চলাফেরায় বুঝতে পারি সে অনেক খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত এবং তার একাধিক স্ত্রী রয়েছে। নিজেকে বাঁচাতে ওখান থেকে সরে যাই। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, জেনি, সাজিদা, জেসমিন, পিংকি, রাজিয়া সুলতানা, জার্কা, ফাতেমা, সাথি, রাবেয়া, সুমি, শারমিন, নিপা, সাবানাসহ মামুনের ১৩ স্ত্রীর সন্ধান। মামুনের অন্ধকার জগতের ভয়ংকর কাহিনি এবং সে বিয়ে করার পর কাজিকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে অনেকের কাবিননামা আটকে দিয়েছে। আমার কাবিননামাও সে আটকানোর চেষ্টা করেছিলো, অনেক কষ্ট করে আমি কাবিননামা সংগ্রহ করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমবার ২০ লাখ টাকা দেনমোহরে কাবিন করে কৌশলে ২০ লাখ টাকাই উশুল দেখিয়ে দেয় মামুন। পরবর্তীতে আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিয়ে চাপ দিলে সে গত বছরের ৪ জুন সাক্ষাতের তারিখ এবং ৭ জুন বিয়ের তারিখ দিয়ে পুনরায় ১০ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্যে কাবিন রেজিস্ট্রি করে দেয় এবং বিয়েতে তার বয়স গোপন করে।’ মামুনের সহযোগী মহিউদ্দিনের কাছ থেকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানতে পারেন, তিনি মামুনের ২৭তম স্ত্রী। যেখানে ভুক্তভোগীর বয়সী জেনি নামে এক স্ত্রীর ঘরে মামুনের ২৪ বছরের একটি ছেলে ও সাজিয়ার ঘরে ১৯ বছরের একটি মেয়ে এবং জেসমিন নামে এক স্ত্রীর ঘরে ১৮ আর ১২ বছরের দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে।
কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বিয়ে করা সব স্ত্রী মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। মামুনের ক্যাডার বাহিনী ও অবৈধ টাকার কাছে অসহায় হয়ে ন্যায়বিচারের আশা ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে খুলনায় বিভিন্ন মিলের পুকুরঘাট তার দখলে।
খুলনা নিউমার্কেটে এখনো তার মহড়া চলে, এরশাদ শিকদারের সহযোগী হওয়ায় তাকে দেখলে সবাই ভয়ে কাঁপে। জানা যায়, পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার কথিত এক মহিলা নেত্রী, ঢাকা সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক আয়াসহ অনেকের সঙ্গে বিয়ে ছাড়াও রয়েছে তার অবৈধ সম্পর্ক। অবৈধ অর্থ উপায়ের কৌশল, মানুষ হত্যার পরিকল্পনাসহ অশ্নীল ফোনালাপের রেকর্ড রয়েছে। যৌতুকের দাবিতে ওই নারী সাংবাদিককে নির্যাতনের ঘটনায় যৌতুক নিরোধ আইন-২০১৮ এর ৩ ধারায় গত বছরের ১২ অক্টোবর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন।
শাহাদাৎ হোসেন ওরফে মামুনসহ অন্য আসামিরা হলেন- মামুনের মা মাজেদা বেগম ও বিয়ের ঘটক আব্দুর রহিম হাওলাদার। মামলা নং ৯৭/২০২০। আদালত মামলা আমলে নিয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন সমকালকে বলেন, ২৮ জানুয়ারি মামুনসহ অন্যদের অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
এদিকে, মামলায় পলাতক অভিযুক্ত শাহাদাৎ হোসেন ওরফে মামুনের সঙ্গে দুটি মোবাইল নম্বরে (০১৭২৫ ৬৫৪৪০৪, ০১৯৭৫ ৬৫৪৪০৪) যোগযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। নারী সাংবাদিক বলেন, ‘মা-বাবাসহ স্বজনের অনেকেই মামুনের হয়ে আমাকে ম্যানেজ করতে মরিয়া হয়ে পড়ে। তার সব কুকর্মের কথা খুলে বলার পর অনেকেই থেমে যায়। কিন্তু যে মা-বাবা মামুনকে শাস্তি দিতে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন, সেই মা-বাবা অদৃশ্য কারণে আমার পাশ থেকে সরে যায়। মামুনকে আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় দেওয়া হয়। এমনকি আমার ছোট বোন, যে পিবিআইসহ সব জায়গায় আমার পক্ষে কঠোরভাবে মামুনের শাস্তি দাবি করে সাক্ষী দিয়ে আসছিল, কৌশলে তাকে আমার কাছ থেকে বাড়ি নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার ছোট বোনের সঙ্গেই মামুন অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এখন ছোট বোনকে এমন একটা ভয়ংকর মানুষের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে। আমার মা-বাবা হয়ে আমার বিরুদ্ধে ও মামুনের পক্ষে আইনের কাছে সাক্ষী দেওয়ায় নিজের বেঁচে থাকার অবস্থান হারিয়ে ফেলি। পরিবারের কর্মকাণ্ডে আইনের প্রত্যেকটা দপ্তরে এখন বিভিন্ন আপত্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি।’ এ অবস্থায় ওই নারী সাংবাদিক ন্যায়বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।- পূর্বপশ্চিমবিডি