যা গ্রহণযোগ্য নয়। যদি ছিনতাই কিংবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতো, তাহলে সেদিন আমাদের সঙ্গে রায়হানকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি কেন প্রশ্ন রাখেন সালমা বেগম। বলেন- সে সময় যদি আমাদের দেখা করার সুযোগ দেয়া হতো তখন আমরা জিজ্ঞেস করতে পারতাম।’ গত বছরের ১০ই অক্টোবর রাতে নগরীর ‘অপরাধরাজ্য’ কাস্টঘর থেকে রায়হানকে গ্রেপ্তার করেছিলো বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ। এরপর ফাঁড়িতে নিয়ে তার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হয়। এতে গুরুতর আহত হলে রায়হানকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার মৃত্যু হয়। বন্দরবাজার ফাঁড়ির পুলিশ প্রথমে রায়হানকে ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে আসার কথা অস্বীকার করে। দাবি করে- কাস্টঘরে গণপিটুনিতে মারা গেছে রায়হান। কিন্তু বাস্তবে ওইদিন কাস্টঘরে কোনো গণপিটুনির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে রায়হানের মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হলে বন্দরবাজার এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে মিলে রায়হানকে ঘটনার দিন রাত আড়াইটার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এবং ওইদিন ফজরের নামাজের পর গুরুতর অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। পুলিশ হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সিলেটে। আন্দোলনও শুরু করেন পরিবার সহ এলাকার মানুষ। পরে পুলিশ রায়হানের মৃত্যুকে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে কোতোয়ালি থানায় মামলা রেকর্ড করে। এ ঘটনার দীর্ঘ ৭ মাসের তদন্ত শেষে বুধবার সিলেটের আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। চার্জশিটে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ এসআই আকবর, সাবেক টুআইসি এসআই হাসান, রায়হানকে গ্রেপ্তারকারী কর্মকর্তা এএসআই আশেক এলাহী, কনস্টেবল হারুন ও টিটুকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া, কোম্পানীগঞ্জের কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানকেও আসামি করা হয়। নোমান এখনো পলাতক রয়েছে। চার্জশিট দাখিলের পর রায়হানের পরিবারের সদস্যরা এ নিয়ে পর্যালোচনামূলক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা গণমাধ্যমে আসা চার্জশিটের নানা বিবরণ নিয়ে আলোচনা করেন। রায়হানের খালাতো ভাই রাব্বি আহমেদ তানভির জানিয়েছেন, ‘পারিবারিকভাবে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে- চার্জশিটের নথি তোলার পর আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
রায়হানের মা সালমা বেগম জানিয়েছেন- ‘এখন রায়হান মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয় বলা হচ্ছে যেগুলো রায়হান জীবিত না থাকায় আমরা হয়তো প্রমাণ করতে পারবো না। রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের খবর দেয়া হয়েছে। রায়হানকে আমাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেয়া হয়নি।’ তিনি জানান, ‘এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল তৌহিদও ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তৌহিদ তো মোবাইল ফোনে রায়হানকে আটকের মেসেজ দিয়েছিল। ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে যাওয়ার কথা বলেছিলো। এই দুইজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।’ এদিকে- পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনা প্রবাহ ঠিক রেখে যাতে সত্য বিষয়গুলো চার্জশিটে উঠে আসে তদন্তকালে সেদিকে নজর রাখা হয়েছিলো। এ কারণে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সাক্ষ্য প্রমাণ এবং প্রযুক্তিগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে।