রাবিতে দাবি আদায়ে ভাস্কর্য উল্টিয়েছে চারুকলার শিক্ষার্থীরাই!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদে শতাধিক ভাস্কর্য উল্টে রাখার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ভাস্কর্য উল্টে রেখে নিরাপত্তা ও দাবি আদায়ে ‘অভিনব প্রতিবাদ’ দাবি করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। সোমবার গভীর রাতে সবার অগোচরে ৬/৭ জন শিক্ষার্থী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চারুকলা চত্ত্বরে শিক্ষার্থীদের তৈরি করা ভাস্কর্যগুলো এলোমেলো পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানাজানি হলে গোটা ক্যাম্পাসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিভাগে গিয়ে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের মাস্টার্সের ওই শিক্ষার্থীরা ঘটনায় নিজেরা জড়িত বলে স্বীকার করে। তাদের দাবি- অনুষদ চত্ত্বরে সীমানা প্রাচীরসহ সার্বিক নিরাপত্তা ও বিভাগের উন্নয়নের দাবিতে তারা এ কাজ করেছে। জড়িত শিক্ষার্থী ইউসুফ আলী স্বাধীন ও ইমরান হোসেন রনি জানান, চারুকলা চত্ত্বরে নিয়মিত বহিরাগতরা এসে নেশা করে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। মাঝে মধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বেও জড়িয়ে পড়ে তারা। এজন্য সীমানা প্রাচীরসহ অন্য দাবিতে আমরা এটা করেছি। রাতের অন্ধকারে কেন এটা করা হলো জানতে চাইলে আরেক শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন রনি বলেন, ‘দিনের বেলায় এসব করলে স্যররা বাধা দিতো তাই আমরা রাতে করেছি। আমরা ৩০-৪০ ছিলাম। আমরা আমাদের শিল্পকর্মের নিরাপত্তা চাই।’ বিপরীত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সঞ্জয়। তিনি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, আমরা নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে একমত। কিন্তু সেজন্য এভাবে শিল্পকর্ম অবমাননা করা উচিত হয়নি। এর সঙ্গে সবাই একমত না। কয়েকজন শিক্ষার্থী নিজেদের সিদ্ধান্তে এসব করেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যব্যক্তিত্ব মলয় কুমার ভৌমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা কখনো আন্দোলনের ভাষা হতে পারে না। আন্দোলনের নামে শিল্পকর্মের অবমাননা করা হয়েছে। তারা অন্যভাবে তাদের দাবি জানাতে পারতো।। এটা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক কাজ হয়েছে।’ জানতে চাইলে মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তফা শরিফ আনোয়ার বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে যেটা করেছে, তাতে বিভাগ তথা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। এটা প্রতিবাদের ধরন হতে পারে না। কেন তারা এটা করলো, তা যথাযথভাবে জানার জন্য তাদেরকে নিয়ে আমরা বসেছি, তাদের কথা শুনছি। যদি তারা যথাযথ উত্তর দিতে না পারে অবশ্যই তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কয়েকজন ছাত্র এটা করেছে। তাদের মধ্যে সামান্য অসন্তোষ ছিল। তেমন কিছু করেনি, এলোমেলো করে রেখেছে। সবাই তো একরকম হয় না। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা তাদের দাবি শুনেছি। ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’