হাওর ও সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত সুনামগঞ্জ জেলায় এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আগাম বন্যার সর্তকতায় প্রযুক্তির ব্যবহারে সময়ের আগেই ঘরে তুলে ফেলা হয়েছে জেলার একমাত্র ফসলটি। কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা বলছেন, আবহাওয়া অনূকূলে থাকায় ও আধুনিক ধান কাটার মেশিন ‘হার্ভেস্টার’ থাকায় এবার বন্যার আগেই কেটে নেওয়া হয়েছে বোরো ফসলটি। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন এবং যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তের দেয়া তথ্য অনুযায়ি, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জে ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে ৯৮ শতাংশ ধান কেটে ফেলা হয়েছে। তবে গতবছরের তুলনায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার ছেয়ে ৪ হাজার ৩০ হেক্টর বেশি আবাদ করায় এবারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লক্ষ ১০ মেট্রিক টন, যা গতবছর ছিল ৮ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৯৩ মেট্রিক টন, উৎপাদন হার ৫.৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়অ এবছর।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, এবছর অনুকুল আবহাওয়া, ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করাসহ, জেলার ৭ হাজার কৃষককে বোরো প্রনোদনা ও ৩৫ হাজার কৃষকে হাইব্রিড বীজ সহয়তার করা এবং কৃষকরা যেন সঠিক সময়ে ধানগুলো ঘরে তুলতে পারেন সেজন্য প্রশাসনের কয়েকদফা সভা ও কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়ন করায় এবছর কোন সমস্যা ছাড়াই আমরা ধানগুলো ঘরে তুলে ফেলতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, গতবছরের তুলনায় এবার আমরা অধিক জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি, যার কারণে আমরা এবার ৯ লক্ষ মেট্রিক টনের অধিক ধান উৎপাদন হয়েছে৷ আমাদের কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি, আমরা এবছর ৭০ শতাংক ভর্তুকি দিয়ে ১১৫ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৯ টি রিপার বিতরণ করেছি, এছাড়া এবছর হাওরে আমরা সর্বোচ্চ ৩০৭ হারভেস্টার মেশিন ধান কেটেছে, যার মধ্যে ৬৩টি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভাড়া করে এবং আমাদের পুরোনো ১২৯ টি মেশিন ব্যবহার করা হয়।
এদিকে এবছর কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই ধান কেটে ঘরে তুলেছেন সুনামগঞ্জের দেখার হাওরের কৃষানী মমিনা খাতুক বলেন, ১৫ কেয়ার জমিত ধান করছি, এবার কিছু ধান গরমে নষ্ট অইছে তবে বেশিরভাগ ধানই ভালা অইছে আমরা তাড়াতাড়ি ধান কাটছি সরকার থকি মেশিন দিসিল ধান কাটার। ইলান যদি আমরারে প্রতিবছর দেওয়া হয় তাইলে আমরা বন্যা আওয়ার আগে ধান কাটি ঘরে তুলতে পারমু। ধানের দামও আমরা ভালা ফাইরাম সরাসরি গুদামে দিতে না পারলেও মণ প্রতি ৯০০-৯৫০ টাকা দাম পাইরাম যা গত বছর ফাইছলাম ৫৫০-৬০০ টাকা।
একই হাওরের কৃষক রমজান আলী বলেন, এইবার ধান ভালা অইছে মেঘও বেশি অইছে না, ধান কাটছিও তাড়াতাড়ি। এখন ধান শুকাইয়া বেছতে পারলে বউ বাচ্চা নিয়া চলমু, সবধানের মালিকতো আমি না, জমি যা ধান অইবো মহাজন আর আমি ভাগাভাগি করিয়া নিমু। তবে কৃষকদের কোন ফড়িয়ার মাধ্যমে ধান না দিয়ে সরাসরি খাদ্য গুদামে দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন সুমামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের ১১টি উপজেলার মধ্যে ৩ টি উপজেলায় এপস’ এর মাধ্যমে ও বাকি ৮টি উপজেলায় কৃষকরা লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচিত করা হবে৷ এবছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ২৯ হাজার মেট্রিক টন ধান সরকারকের গুদামে দিতে পারবো। আপনারা ইতিমধ্যে জানেন সরকার এবছর দাম এক বাড়িয়েছে ১ হাজার ৮০ টাকা করেছে, সেজন্য আমি চাইবো কোন ব্যক্তি মাধ্যমকে না ধরে কোন ফড়িয়ার মাধ্যমে না এসে সরাসরি কৃষক ধান দিবেন।
তিনি আরও বলেন, সকলের প্রচেষ্টায় আমরা এবছর হাওরের বোরো ধান খুব ভালোভাবে কাটা হয়েছে, এবছর আমাদের ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন এবং যার বাজার আর্থিক মূল্য ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবছর ফলনও ভালো হয়েছে এবং ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করার ফলে আমরা দ্রুত ধান কাটতে পেরেছি যার অন্য সময়ের থেকে দ্রুতই। এছাড়া এবছর অন্যান্য জেলা থেকে সুনামগঞ্জে ধান কাটতে আসেন ৯ হাজার ৮৭০ জন শ্রমিক এবং সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে ধান কেটেছেন মোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার শ্রমিক।
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৭৯ বার