সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করত তারা
গোয়াইনঘাট থানাপুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে গ্রেফতার করে নিধু রাম ও ফরিদ উদ্দিনকে ঢাকায় নিয়ে যায় সিআইডি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার সাভার থানায় মামলা করা হয়েছে। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এদিকে, গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান এই দুই ভয়ঙ্কর প্রতারক ও তাদের চক্রের বিষয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান জানান, লাইভ স্ট্রিমিং অ্যাপ ‘স্ট্রিমকার’-এ বিন্স ও জেমস নামের দুটি ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহার করে ওই চাক্র। এসব মুদ্রার বিনিময়ে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার ফাঁকে তাদের নানা ধরনের লোভ দেখিয়ে কোটি টাকার জুয়ায় টেনে নেয়া হয়। এক লাখ বিন্স এক হাজার ২০ টাকা ও এক লাখ জেমস ৬০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আর এই টাকা সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এভাবেই ওই স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে নিধু রাম ও ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি।
মো. কামরুল আহসান আরও জানান, এই প্লাটফরমে বিভিন্ন অপরাধ পরিচালিত হওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল। এই অনুসন্ধানে ১৫টি ব্যাংক একাউন্ট থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য পায় সাইবার পুলিশ। এই অ্যাপের মূল টার্গেট সুন্দরী তরুণী ও বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা।
গত ১৯ মে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করে। পরে এদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করা হয়। যা সাইবার পুলিশ সেন্টার তাদের অধীনে নেয়। এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্য ও আগের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) গত বুধবার রাতে সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে গোয়াইনঘাট থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন নিধু রাম দাস ও ফরিদ উদ্দিন এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওই চক্রের অন্যান্য সদস্য। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি থাকে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করে বিশেষ কিছু চক্র এক ধরনের অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেখানে তরুণীদের হোস্টিং করিয়ে বিভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জন করা হয়। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার প্রলোভনে অ্যাপে প্রবেশ করেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য বিন্স নামে ভার্চুয়াল মুদ্রা কিনতে হয়। সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হন ব্যবহারকারীরা।
টাকা সংগ্রহের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এই টাকা সংগ্রহ করা হতো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে। এই এজেন্সিগুলো তা কিনে নিতো বিদেশি অ্যাপের অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এরকম স্ট্রিমকারের অনেক এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করে। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, নেটেলার, স্ক্রিল ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে বলেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা। কামরুল আহসান বলেন, স্ট্রিমকার পরিচালনায় জড়িত প্রত্যেকের একাধিক ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্ট রয়েছে। গ্রেফতারকৃত নিধু রাম দাসের ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্টের মাধ্যমে গত এক বছরে ১০ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যজন ফরিদ উদ্দিনের ব্যাংক ও বিকাশ একাউন্টে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।