সংস্কারপন্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর দীর্ঘ সময় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্ম’দ মনসুর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। যোগ দেন আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক নেতা ড. কা’মাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরামের নেতা হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে জয়ী হন সুলতান মনসুর। কিন্তু জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ায় তাকে দল ও জোট থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর থেকে আবারও রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। গত বছর দেশে করো’নাভাই’রাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি বলে অ’ভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার ‘রুটিন রাজনীতি’তে সীমাবদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতির রাজনৈতিক ভূমিকা।
সুলতান মনসুরের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বহিষ্কার হয়ে সাবেক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তার। কিন্তু এখনও নিজ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে সুস’ম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেননি তিনি। স্থানীয় বিএনপির অল্পকিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে। এ অবস্থায় আগামীতে তার পক্ষে ভোট করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
মৌলভীবাজার-২ আসন কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজে’লার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত। স্থানীয়রা বলছেন, গত বছরের মা’র্চে দেশে মহামা’রি করো’নাভাই’রাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর আর এলাকায় যাননি সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্ম’দ মনসুর। সামাজিক-রাজনৈতিক কোনো কর্মকা’ণ্ডে তাকে পাওয়া যায়নি। গত বছর থেকে এলাকার জনগণের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ নেই। নিজ থেকে চালাননি কোনো ত্রাণ কার্যক্রমও। তবে, তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিত কিছু নেতাকর্মীকে ত্রাণ দিয়েছেন।
গত বছরের এপ্রিলে কুলাউড়া উপজে’লার স্থানীয় এক বাসিন্দা ত্রাণের জন্য এমপিকে ফোন দিলে তার সঙ্গে খা’রাপ আচরণের একটি অডিও ফোন রেকর্ড ফাঁ’স হয়। তখন বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন সুলতান মনসুর।
কুলাউড়া উপজে’লা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইস’লাম রেনু এ প্রসঙ্গে ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, ‘আমি তো উপজে’লা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আর সুলতান মনসুর তো বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এমপি হয়েছেন। এখন আমি তার স’ম্পর্কে ভালো বললে সেটাও খা’রাপ, আর খা’রাপ বললে সেটা তো খা’রাপই। করো’না শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এলাকায় আসেননি। এলাকায় কেউ তাকে দেখেননি। আম’রা আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারি তহবিল থেকে কিছু টাকা স্থানীয়দের মধ্যে বণ্টন হয়েছে বলে শুনেছি। তবে, সেটা তার লোকজনই হরিলুট করেছেন বলে অ’ভিযোগ আছে।’
গত বছরের মা’র্চে দেশে করো’নার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর সুলতান মনসুর এলাকায় যাননি বলে দাবি করেন কুলাউড়া উপজে’লা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাচ্চু। তিনি ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, ‘তিনি এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন। এলাকায় তার কোনো কার্যক্রম নেই। সামাজিক-রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রমে তাকে দেখা যায় না। সংসদীয় এলাকার কোনো দাফতরিক কাজ থাকলে সেটা তিনি ঢাকায় বসেই করেন।
আপনাদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয় কি না— জানতে চাইলে জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘ঈদ-চাঁদ উপলক্ষে ফোনে কথা হয়। এর বাইরে কোনো যোগাযোগ নেই।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতান মোহাম্ম’দ মনসুর আহম’দ ঢাকা পোস্ট’কে বলেন, ‘আমা’র শরীরটা একটু খা’রাপ। নিজেও একবার করো’নায় আ’ক্রান্ত হয়েছি। এ কারণে কোথাও বের হই না।’ সারা পৃথিবী করো’না নিয়ে ব্যস্ত উল্লেখ করে সুলতান মনসুর বলেন, ‘দেশে তো এখন রাজনীতি নেই। কাজেই বাসায় থাকা হয়। আর রুটিন অনুযায়ী সংসদে যাওয়া হয়।’ নিজ নির্বাচনী এলাকায় না যাওয়াসহ এলাকার মানুষের অ’ভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সুলতান মনসুর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুলতান মনসুরের ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, রাজনৈতিকভাবে কিছুটা অসহায় অবস্থায় আছেন তিনি। কারণ, সংস্কারপন্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। আর গত নির্বাচনে বিএনপির মা’র্কা নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হলেও জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনিই প্রথম শপথ নেন। সে কারণে এ অংশের (বিএনপি) সঙ্গেও তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আওয়ামী লীগ কি তাকে ফিরিয়ে নেবে? সম্ভবত না। এছাড়া বয়সও হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে হয়তো তার পক্ষে আর ভোটের রাজনীতি করা সম্ভব নাও হতে পারে।
রাজনৈতিক জীবন
সিলেট এম সি কলেজে পড়াকালীন সুলতান মনসুরের রাজনৈতিক জীবন শুরু। তিনি সেসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যু’ক্ত হন। বঙ্গবন্ধুকে হ’ত্যার প্রতিবাদে কাদের সিদ্দিকী’র নেতৃত্বে অ’স্ত্র হাতে প্রতিরোধ আ’ন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন সুলতান মোহাম্ম’দ মনসুর। এ কারণে জীবনের বড় একটা সময় তাকে কা’টাতে হয় ভা’রতের মেঘালয়ের পাহাড়ে, আত্মগো’পনে। আশির দশকে সারা বাংলাদেশে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দেওয়ায় ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন এ নেতা। ১৯৮৯ সালে ডাকসু’র ভিপি পদে তার বিজয় ছিল ’৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো জয়। তার নেতৃত্বে ‘৭৫-এর পর প্রথম বঙ্গবন্ধুর ছবি স্থান পায় ডাকসু ভবনে।
১৯৯৬ সালে সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে বিজয়ী হন। (এটি ছিল ওই আসনে নৌকার সর্বশেষ জয়। এরপর কখনও এ আসনে জয় পায়নি নৌকা) ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৭৯ হাজার ৭৪২ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন নৌকা প্রতীকে মহাজোটের প্রার্থী এম এম শাহীন। সৌজন্যঃঢাকাপোস্ট
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
১২৮ বার