মোবারক হোসাইন,সুনামগঞ্জ  : সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় দায়েরকৃত ধর্ষন মামলার অন্যতম পলাতক আসামী জুনু বেগমকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৮ জুলাই রোববার রাত ১১ টায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামে সদর থানার এসআই শরীফ উদ্দিন ও ছাতক থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

মামলার বিবরনে প্রকাশ,গত ৩ রা জুন বৃহস্পতিবার বিকেল ২টায়, ভিকটিমের সৎমা  জুনু বেগম স্বামী সিরাজ মিয়াকে চায়ের সাথে নেশা পান করিয়ে তার স্কুল পড়ুয়া কিশোরী কন্যা কে ফুসলিয়ে  সুনামগঞ্জ সদর থানার সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামের পিত্রালয় হতে সিলেটে নিয়ে যায়। ঐদিন রাত ১২টায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন মা আবাসিক হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রেখে ভিকটিমকে মাহমদ আলীর দ্বারা জোরপূর্বক ধর্ষন করায়। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন সংশোধন আইন ২০২০ এর ৭,৯ (১) ও ৩০ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।

ইব্রাহিমপুর পশ্চিমহাটি গ্রামের আশরাফ আলীর কন্যা ও ভিকটিমের খালা বাদী হয়ে সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মোকদ্দমাটি দায়ের করেন। মামলায় বিজ্ঞ আদালত তদন্তপূর্বক এফআইআরক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সদর থানার পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। মামলায় ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের আছমত আলীর বখাটে পুত্র ৩ সন্তানের জনক মাহমদ আলী (৩৫) এবং একই গ্রামের মৃত মুসলিম আলীর কন্যা ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পূর্ব সদরগড় ইব্রাহিমপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জুনু বেগম (৩৫) সহ অজ্ঞাত লোকদেরকে আসামী করা হয়।

মামলার বিবরনে জানা যায়,ভিকটিম এর মায়ের সাথে সিরাজ মিয়ার প্রথম বিবাহ হয়। জন্মের ১ বছরের ব্যবধানে ভিকটিমের মা মারা গেলে জুনু বেগম ভিকটিমের সৎমা হিসেবে  আসে। অন্যদিকে মাতৃহীনা ভিকটিম কিশোরী নানা নানীর সংসারে বড় হয়। ৯ বছর বয়সের সময় নানা নানীর কাছ থেকে সিরাজ তার কন্যাকে নিজের কাছে নিয়ে যান। সৎমা জুনু বেগম ৯ বছর বয়স থেকেই ভিকটিম কে দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় ইব্রাহিমপুর সদরগড় গ্রামে সৎমা জুনু বেগমের বিরুদ্ধে একাধিকবার সামাজিক সালিশ হয়। সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিল সোমবার রাত ৮টায় ভিকটিমকে মারপিট করে পিত্রালয় থেকে বিতাড়িত করে দেয় সৎমা জুনু বেগম। এ ঘটনায় ভিকটিমের খালা রেজিয়া বেগম বাদিনী হয়ে ছাতক থানার কালারুখা ইউনিয়নের বোবরাপুর গ্রামের আছমত আলীর স্ত্রী জাহানারা বেগম ও ভিকটিমের সৎমাতা জুনু ও ভগ্নিপতি সিরাজের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

সদর থানার এসআই মোঃ শরীফ উদ্দিনের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় সুনামগঞ্জ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীতে অধ্যয়নরত স্কুল ছাত্রী ভিকটিমকে সিলেটে ফুসলিয়ে নিয়ে ধর্ষনের ঘটনা ঘটায় মাহমদ আলী। বোবরাপুর গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজন জানান, জুনু বেগম খুব অসৎ চরিত্রহীনা, মাদক ও নারী ব্যবসায়ী মদ্যপায়ী মহিলা। স্বামীর চোখ ফাকি দিয়ে ১৫ দিন পরপরই পিত্রালয়ে যাওয়ার কথা বলে সিলেট শহরের বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে সে দেহ ব্যবসায় লিপ্ত হয় । ধর্ষনকারী মাহমদের সাথেও তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে।

এছাড়া  গ্রামের প্রতিবাদী লোকজনের বিরুদ্ধে থানা পুলিশে অভিযোগ দায়েরের হুমকী দিয়ে চাঁদা আদায়ে জড়িত রয়েছে সে।  সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মোঃ সহিদুর রহমান ও ছাতক থানার ওসি মো: নাজিম উদ্দিন ধর্ষন মামলার আসামী জুনু বেগমকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,ধর্ষনকারীর সহযোগী জুনু বেগমকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। মূল আসামী ধর্ষক মাহমদ আলীকে গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। 

এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :Share on FacebookShare on Google+Tweet about this on TwitterEmail this to someoneShare on LinkedIn