ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে-আতিকের অভিযোগ মানতে নারাজ হাবিব। কোথাও কোনো দমনপীড়ন হচ্ছে না বলে দাবি তার। বলেছেন- ‘কিসের দমনপীড়ন, কোথায় দমনপীড়ন হচ্ছে। দৃশ্যমান তো কোনো কিছুই নেই। বরং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাই আতিকের সঙ্গে নেই।’ সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে ফের শুরু হয়েছে পাল্টাপাল্টি। এ আসনের আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। এর বাইরেও ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মো. মিয়া। চার প্রার্থীর মধ্যে হাবিব ও আতিকের মধ্যে চলছে কথার যুদ্ধ।
২৮শে জুলাই এ আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সিলেটে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে এ আসনে ভোটগ্রহণ করা হতে পারে। কারণ- সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে ৭ই সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণ করতে হবে। স্থগিত হওয়া নির্বাচনের ভোটগ্রহণের আগে গত সোমবার জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ আসনের নিরপেক্ষ ভোট দাবি করা হয়েছে। গত রোববার দলটির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রধান নির্বাচন কমিশনার একেএম নুরুল হুদার সঙ্গে দেখা করে এ দাবি জানিয়েছেন। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে- মাঠ পর্যায়ের কিছু পুলিশ কর্মকর্তার আচরণে সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে মাঠ পর্যায়ের ওই সকল অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকও জানিয়েছেন- তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও কর্মীদের প্রতি মাঠ পর্যায়ের কিছু পুলিশ যে আচরণ করছে তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ছাড়াও নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব গতকাল বিকালে জানিয়েছেন- নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার কিংবা দমনপীড়নের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। বরং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সবচেয়ে বেশি সুযোগ দেয়া হয়েছে বা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে নির্বাচন পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি জানান- জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরাই তাদের প্রার্থীর সঙ্গে নেই। তাদের দলের নেতাকর্মীরা পদত্যাগ করছেন। এসব ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর চাপিয়ে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেট-৩ আসনের মানুষ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। সাবেক এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এলাকার মানুষের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ আসনের দলমত নির্বিশেষে সব মানুষই নৌকার বিজয়ের জন্য মাঠে রয়েছে।
এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই নির্বাচনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে জানান হাবিব। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। এদিকে- এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ও আতিকুর রহমান আতিক সামাজিক ও দলীয় ব্যানারে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন। হাবিবুর রহমান হাবিব শোকের মাস উপলক্ষে দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জের উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়েও আওয়ামী লীগের শোকসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে দলীয় কর্মী সূচির কারণে তিনি আগস্টের প্রথম দিন থেকেই ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে সিলেটে এসে দলীয় ব্যানারে সাংগঠনিক কার্যক্রম দিয়ে মাঠে অবস্থান নেন আতিকুর রহমান। কিন্তু দক্ষিণ সুরমার একটি ঘটনায় বিতর্কিত হওয়ার পর কিছুটা পিছু হটেছেন। এখন নতুন করে পরিকল্পনা সাজিয়ে ফের মাঠমুখী হচ্ছেন। তবে- আতিক সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপর দোষ না চাপালেও পুলিশ প্রশাসনের ওপর অভিযোগ তুলেছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরীও ভোটের মাঠে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ফের সরব হয়েছেন। তিনিও বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়ে অংশ নিচ্ছেন এবং মতবিনিময় করছেন। গত সোমবার তিনি দক্ষিণ সুরমা, লালাবাজার ইউনিয়নে দিনভর গণসংযোগ এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া তিনি লালাবাজার ইউনিয়নের বাঘর খলায় সাবেক এমপি মরহুম পীর হাবিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করেন এবং ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সর্বস্তরের যুব সমাজ উপস্থিত ছিলেন। শফি চৌধুরী জানিয়েছেন- ‘এমপি নির্বাচিত হওয়ায় ১৫ বছর পূর্ব থেকে এই এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে রয়েছি। কে কোন্ দল করেন সেটা আমি কখনো বিবেচনায় নেইনি। আমার কাছে যে বা যারাই কোনো কাজের জন্য এসেছেন আমি সেটা করে দেয়ার চেষ্টা করেছি।’
সংবাদ টি পড়া হয়েছে :
৬৩ বার